২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চোখ রাঙাচ্ছে মিয়ানমার!

সমরশক্তি বাড়ানোর বিকল্প নেই

-

বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে ‘সব কিছু উজাড় করে দিয়েও যখন মন পাওয়া যায়নি’ তখনই সীমান্তে চোখ রাঙাচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিবেশী মিয়ানমার। বাংলাদেশ সীমান্তের ওপাশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের আবাসভূমি রাখাইন রাজ্যে বড় ধরনের সমরসজ্জা গড়ে তুলছে দেশটির সরকার। সেনাসংখ্যা বাড়ানো ছাড়াও সাবমেরিন, বিভিন্ন ধরনের জঙ্গিবিমান, ভারী কামান এমনকি ৫০০ কিলোমিটার দূরপাল্লøার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
২০১৭ সালে পুলিশ চৌকিতে বিদ্রোহী হামলার অজুহাত দেখিয়ে রাখাইনে মিয়ানমারের যে সেনা হামলা শুরু হয়, এবারের সেনাসমাবেশ সে রকম কিছু ভাবার কোনো কারণ নেই। ওই হামলায় মূল লক্ষ্য ছিল নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ, যাদের দু’টি হাত ছাড়া রুখে দাঁড়ানোর আর কোনো হাতিয়ার ছিল না। সে দেশের সেনাবাহিনীর পরিচালিত গণহত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও এবং সমূলে উচ্ছেদের মুখে সাড়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু মিয়ানমারের এবারের লক্ষ্য কারা?
এমন একসময়ে মিয়ানমার এই সেনাসমাবেশ করছে যখন দেশটি আন্তর্জাতিক বিশ্বে তীব্র চাপের মুখে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছে চারজন মিয়ানমার সেনা। তারা যাদের নির্দেশে গণহত্যা, জাতিগত নির্মূলের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের নামও প্রকাশ করে দিয়েছে। হেগের আদালতের শুনানিতে এই স্বীকারোক্তি জোরালো সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ দিকে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইন বিষয়ে সংস্থার সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছে মিয়ানমার সরকারের কাছে। সাড়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে চাপে পড়া বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর কোনো রকম চাপ সৃষ্টিতে সক্ষম না হলেও সম্প্রতি আসিয়ানের ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করেছে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মিয়ানমারের জন্য যে জটিল তাতে সন্দেহ নেই। এই প্রেক্ষাপট মনে রেখেই বাংলাদেশের কোনো কোনো পর্যবেক্ষক বলার চেষ্টা করছেন, রাখাইনে সেনা মোতায়েনের ঘটনা রোহিঙ্গা-সঙ্কট থেকে বিশ্বের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেয়ার একটি প্রয়াস হতে পারে। এই পর্যবেক্ষণের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে চাপের মুখে পড়া একটি দেশ কি যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কোনো ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিতে পারে? এতে তো বরং বিশ্বের সব মনোযোগ নতুন করে রোহিঙ্গা গণহত্যা, হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার, মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি প্রভৃতির ওপর এসে পড়ার কথা। আমাদের ধারণা, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের আর কখনোই ফিরিয়ে নিতে চায় না। তাদের পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করে সেটিকে নিজেদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র বানাতে চায়। বাংলাদেশ যাতে এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য না করে তা নিশ্চিত করতেই রাঙা চোখ দেখানোর এই চেষ্টা।
কোনো কোনো পর্যবেক্ষকের ধারণা, মিয়ানমারে এখনো যেসব রোহিঙ্গা আছেন তাদের মেরেধরে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ধরনের কিছু করে চাপ সৃষ্টি করা অথবা বিচ্ছিন্নতাকামী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো অভিযান পরিচালনার উদ্দেশ্যে রাখাইনে সমরসজ্জা বাড়ানো হয়ে থাকতে পারে। আমরা জানি, এরই মধ্যে মিয়ানমারের সেনাশাসকরা গরিব দেশটিকে সমরসজ্জায় বেশ চরমে নিয়ে গেছেন। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের জনসংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ হলেও সেনাসদস্য বিবেচনায় দেশটির প্রতিরক্ষা আকার বাংলাদেশের দ্বিগুণ। শুধু তা-ই নয়, চীন, রাশিয়া, ইসরাইল, উত্তর কোরিয়ার সাথে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের সরকারের ঘনিষ্ঠতম মিত্র ভারতের সাথেও তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মিত্রদের কাছ থেকে কার্যকর সমর্থন আদায়ে সক্ষম না হলেও মিয়ানমার তার জঘন্য অপরাধের সপক্ষে ওই দেশগুলোর সমর্থন পেয়েছে। সুতরাং দেশটি এখন বাংলাদেশকে চোখ রাঙানোর মতো ‘লায়েক’ হয়ে উঠেছে বলে ভাবতেই পারে।
এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে আমরা বলতে চাই, শুধু কূটনৈতিক পর্যায়ে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে বিষয়টি ছেড়ে দিলে ওদের ধৃষ্টতা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। বাংলাদেশকে সামরিক শক্তি এতটা বাড়াতে হবে, যাতে মিয়ানমার সংযমের সীমা ছাড়াতে সাহসী না হয়ে ওঠে।


আরো সংবাদ



premium cement