১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রদীপের নির্মমতার শিকার অনেকে

তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন

-

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ মাদক দমনের নামে নৈরাজ্য কায়েম করেন। যাকে খুশি তিনি ক্রসফায়ারে দিয়েছেন। যাকে খুশি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত করে ছেড়েছেন। তার নির্মম নির্যাতনে অনেক পরিবার আজ ধুঁকে ধুঁকে মরছে। অনেকে তার দেয়া মিথ্যা মামলায় এখন সাজা খাটছেন। এমন দুর্ভাগ্যের শিকার পরিবারগুলোর খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের সূত্রে প্রকাশ্যে এসেছে। এসব নাগরিকের চরম দুর্ভোগের দায় সরকার এড়াতে পারে না। ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সরকার অবিলম্বে ভুক্তভোগেী এসব মানুষের পাশে দাঁড়ালে তাদের কষ্ট লাঘব হতে পারে। এদের সবশেষ অবস্থা জানা সরকারের জন্য মোটেও কঠিন নয়।
একজন স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের জীবনে ভয়াবহ নিপীড়ন নেমে এসেছিল; কারণ তার সম্পাদিত স্থানীয় পত্রিকায় প্রদীপ ও তার সহযোগী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অপকীর্তি নিয়ে খবর প্রকাশ করেছিলেন। জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি ঢাকায় এসে পরিবারসহ আত্মগোপন করেন। ঢাকার পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে প্রদীপ তাকে ঢাকার মিরপুর থেকে আটক করে টেকনাফ থানায় নিয়ে যান। নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনে পুলিশের অভ্যন্তরীণ সিন্ডিকেট কতটা শক্তিশালী এটা তার প্রমাণ। ফরিদুলের ওপর যে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয় তা তার স্ত্রীর সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
তার চোখের ভেতর মরিচের গুঁড়া ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেয়া হয় মরিচের গুঁড়া ও গরম পানি। উপড়ে ফেলা হয় দুই হাতের সব নখ। ভেঙে দেয়া হয় হাত-পা ও আঙুলের জয়েন্ট। মামলা শক্ত করার জন্য তার বিরুদ্ধে সাজানো হয় মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার নাটক। কক্সবাজার শহরে তার বাসায় চালানো অভিযানে চার হাজার পিস ইয়াবা, গুলিসহ দু’টি অগ্নেয়াস্ত্র ও বিদেশী মদের বোতল উদ্ধারের কাহিনী ফাঁদা হয়। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে দেয়া হয় ছয়টি মামলা। এ দিকে মুমূর্ষু শরীরের কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি ফরিদুলের, চোখ অন্ধ হওয়ার অবস্থা। আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তি হয়ে যায়। তিনি এখন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন।
প্রদীপ যখন একজন সৎ, আদর্শবান সাংবাদিককে নির্যাতন চালিয়ে তাকে প্রায় নিঃশেষ করে দিচ্ছিলেন তার পক্ষে সাংবাদিকরাও দাঁড়ানোর সাহস পাননি। ভয়ে ফরিদুল যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তখন তিনি নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন। অন্য অনেকের নিরাপত্তার আকুতির মতোই এ আবেদনটিও তাকে রক্ষা করতে কোনো কাজে আসেনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে স্বাধীন দেশে অকথ্য নির্যাতন চালানো ও মিথ্যা মামলা করে আদালত থেকে রায় পেতে অপরাধী প্রদীপদের কোনো সমস্যা হয়নি। ফরিদুলের মতো অনেক ভুক্তভোগীর পরিচয় এখন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে ক্রসফায়ার হওয়া একজন মেম্বারের পরিবারও রয়েছে। তাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার পর তার বাসা থেকে ৫১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এরপর তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও ক্রসফায়ারের ভীতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন।
টেকনাফ থানার দায়িত্বে থেকে পুরো জেলায় প্রদীপ এই নির্মমতা চালিয়েছেন। প্রথমত সাংবাদিক ফরিদুলের মতো যারা মিথ্যা মামলা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া জরুরি। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিদ্যমান মিথ্যা মামলা তুলে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। অন্য দিকে পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে যারা বিচারের সুযোগ নিতে পারেননি তাদের সে সুযোগ করে দিতে হবে। এ কথা স্পষ্ট যে, অন্যায়ের বিচার না হওয়ার কারণেই রাষ্ট্রের ভেতরে এমন ডিপ স্টেট সৃষ্টি হতে পেরেছে। এ জন্য পুলিশের মধ্যে সিন্ডিকেটের অস্তিত্বও পাওয়া যাচ্ছে। মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডে এই সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব এখন আর চাপা নেই। সেই সিন্ডিকেটকে অচিরেই শনাক্ত করে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সারা দেশে এমন আরো অনেক ডিপ স্টেট থাকলে আরো কোনো বড় দুর্ঘটনার আগে সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

সকল