২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্বাস্থ্য খাতে ত্রুটিপূর্ণ দুর্নীতির মামলা

ছাড় পেয়ে যাচ্ছে হোতারা

-

করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে ফাঁস হওয়া দুর্নীতি আর কেলেঙ্কারির পর সরকারি সংস্থাগুলোর তড়িঘড়ি করে দায়ের করা মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এক রকম; মামলা দায়ের করা হচ্ছে অন্যভাবে। ক্ষেত্রবিশেষে যাদের আসামি হওয়ার কথা তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে। যে ধারায় মামলা হওয়া উচিত ছিল, তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে অপেক্ষাকৃত লঘু দণ্ডের ধারা। একই সাথে ফাঁক থাকছে আইন প্রয়োগে। এভাবে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত অপরাধীদের যথোপযুক্ত শাস্তি হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রকৃত অপরাধ এবং অপরাধীদের আড়াল করতেই অনেক সময় দ্রুত মামলা দায়ের করা হয়।
করোনা পরীক্ষা এবং এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাথে রিজেন্ট হাসপাতালের একটি সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন হয়। এখন পর্যন্ত করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে এতে, যাতে কিছু সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশের তথ্য-প্রমাণ স্পষ্ট। ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট হাসপাতালকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতে সহায়তা করা, অপরাধলব্ধ অর্থ আয়, সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যরা চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছেন। এমন কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় হলেও সরকারি কর্মকর্তাদের (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী) সহযোগিতায় সাহেদের প্রতারণা, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কোনো মামলা হয়নি। কোনো সরকারি কর্মকর্তাকেও আইনের আওতায় আনা হয়নি। সাহেদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মামলা হয়েছে বটে; যাতে সাহেদ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেউ আসামি হয়নি। একই ঘটনা জেকেজি’র সাবরিনা-আরিফের ক্ষেত্রেও। করোনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় সাবরিনা-আরিফ ছাড়াও আরো ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করা হয়নি। অথচ জেকেজির সাথে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে সমঝোতা চুক্তি হয়; সেখানে সরকারের পক্ষে যারা স্বাক্ষর করেছেন, তারাও আসামি হওয়ার কথা। আর নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল লি:’-এর স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএসএমএমইউ। মামলায় শারমিনকে একক আসামি করা হয়েছে। অথচ কেনাকাটায় পিপিআর অনুসরণ করা হয়নি। সরবরাহ করা মাস্ক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণের পর সেগুলো ব্যবহারও করা হয়েছে। শুধু এক হাজার ১০০টি মাস্ক ‘নিম্নমানে’র বলে চিহ্নিত করা হয়। আলামত নষ্টের উদ্দেশ্যে পরে সেগুলো ফেরতও দেয়া হয়। এর পরও মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে আসামি করা হয়নি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসএমএমইউতে মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা মামলায় যোগসাজশের বিষয়টি আসেনি। এটি ত্রুটিপূর্ণ মামলা। যারা মালামাল গ্রহণ করেছেন তাদেরও আসামি হওয়ার কথা। উল্টো এজাহারে পেনাল কোডের ৪২০ ধারা যুক্ত করায় বিএসএমএমইউর কেউ জড়িত কি না সেটি খোঁজার সুযোগ সঙ্কুচিত হয়েছে। রিজেন্ট-জেকেজির ক্ষেত্রেও ভুল ধারায় মামলা হয়েছে। এ দু’টি ঘটনায় মানিলন্ডারিং ধারা প্রযোজ্য হলেও তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ক্ষীতপূরণ কে দেবে?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রক্ষায় ঘটনা ধামাচাপা দিতেই তড়িঘড়ি করে দায়সারা গোছের মামলা দেয়া হয়েছে। এতে বিচারে আসামিপক্ষ লাভবান হতে পারে। সাধারণত ত্রুটিপূর্ণ মামলার সুফল আসামিপক্ষই পেয়ে থাকে। চূড়ান্ত ফল অপরাধীর পক্ষেই যায়। অন্য দিকে মামলার সঠিক তদন্ত না হলে অনেক নির্দোষ ব্যক্তিও দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। এ জন্য মামলা দায়ের এবং তদন্ত শুরুর আগেই এর বিচার-ভবিষ্যৎ বিবেচনা করা উচিত ছিল।


আরো সংবাদ



premium cement