বাংলাদেশের জন্যও শিক্ষণীয়
- ০৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় লেবাননের বৈরুত বন্দরে স্মরণকালের ভয়াবহতম বিস্ফোরণে দেড় শ’ জনের বেশি নিহত এবং অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ আহত হন। তা ছাড়া কয়েক লাখ গৃহহারা হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে নৌসেনাসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীও রয়েছেন। অত্যাধুনিক অট্টালিকাপূর্ণ বিস্তীর্ণ এলাকা এমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে যে, তা পারমাণবিক বোমার প্রলয়তাণ্ডবের কথা মনে করিয়ে দেয়। সময় যত যাচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা এবং ক্ষতির পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, ভয়াবহ বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের প্রায় তিন হাজার টন বিপজ্জনক মজুদ এবং এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অমার্জনীয় গাফিলতির দরুন এই তুলনারহিত ট্র্যাজেডি সংঘটিত হয়েছে।
আলজাজিরা প্রামাণ্য সূত্র উদ্ধৃত করে জানায়, ‘লেবাননের রাজধানী বৈরুতের ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর এলাকায় একটানা দু’বছর ধরে পড়ে রয়ে ছিল এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কেমিক্যাল। লেবাননের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে এবং তার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে জানতেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে একজন রুশ মালিকের একটি পণ্যবাহী জাহাজ কোনো সমস্যার কারণে বৈরুতে ভিড়তে বাধ্য হয়। লেবানন সরকার বন্দর ছাড়তে বাধা দেয়ায় জাহাজটি সেখানেই থেকে যায়। একসময় জাহাজের বিপুল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরে মজুদ করা হয়েছিল। স্থানটি রাজধানী বৈরুতের প্রবেশপথে এবং মহাসড়কসংলগ্ন। কাস্টম কর্তৃপক্ষ বারবার লিখিতভাবে সরকারের নজরে আনে এই কেমিক্যালের বিপদের ব্যাপারে। এসব পত্রে প্রস্তাব করা হয়েছে মজুদ করা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রফতানি কিংবা সেনাবাহিনীর হাতে দেয়া অথবা সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য। প্রতিটি চিঠিতে বলা হয়েছিল, অরক্ষিত পরিবেশে এটা ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে বন্দর ও মানুষের জন্য। কিন্তু কোনো পত্রেরই জবাব মেলেনি।
এ দিকে, লেবাননের জনগণ বন্দর নিয়ে দুর্নীতির দরুন প্রশাসনের ওপর বিষম ক্ষুব্ধ আগে থেকেই। আর এই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়ার শামিল। লেবাননের নাগরিকরা বৈরুত বন্দরকে বলে থাকেন ‘চল্লিশ চোরের গুহা’। চরম দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য, কর ফাঁকি, অব্যবস্থাপনা প্রভৃতি এর কারণ। এবার কেমিক্যাল বিস্ফোরণের পর প্রথম বিদেশী নেতা হিসেবে ছুটে আসা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে বিক্ষুব্ধ জনতার বক্তব্য ছিল, দুর্নীতিবাজদের হাতে যেন ত্রাণসামগ্রী ও সাহায্যের অর্থ তুলে দেয়া না হয়। ম্যাক্রোঁ এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখ্য, সরকারের দুর্নীতি ও ব্যর্থতা মিলিয়ে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও পণ্যের অগ্নিমূল্যসমেত জাতীয় অর্থনীতির চরম দুর্গতির প্রেক্ষাপটে কিছু দিন ধরে লেবাননে ব্যাপক ও সহিংস গণ-আন্দোলন চলে আসছে।
লেবাননি কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণের পর প্রথমে বলেছে, বন্দরে আতশবাজির মজুদে আগুন লেগেছে। কিন্তু এ ঘটনায় যে প্রচণ্ড শব্দ ও অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার ভয়াবহ মাত্রার প্রেক্ষাপটে জনগণ এসব কথাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। পরে সরকার স্বীকার করেছে, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নামের রাসায়নিক যৌগই এই মহাদুর্ঘটনার কারণ। এটা যে অতিমাত্রার বিপজ্জনক, তা এর আগেও বারবার প্রমাণ হয়েছে। অথচ লেবানন সরকার তা থেকে শিক্ষা নেয়নি।
বৈরুতের এ ঘটনায় বাংলাদেশের প্রশাসন ও জনগণের বিরাট শিক্ষণীয় আছে। কেমিক্যালের অনিরাপদ মজুদ ও ব্যবসায় কত মারাত্মক হতে পারে, গত কয়েক বছরে পুরান ঢাকার নিমতলী ও চুড়িহাট্টার ভয়াল ট্র্যাজেডি এর সাক্ষ্য দিচ্ছে। কেমিক্যালের মতো বিপজ্জনক দাহ্যবস্তু যেকোনো মুহূর্তে অপরিমেয় ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনতে পারে যদি সংশ্লিষ্ট লোকজন আর প্রশাসন পরিণতি সম্পর্কে বেখবর থাকে।
বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণ থেকে যথাযথ শিক্ষা নিয়ে আমরা কেমিক্যালের উৎপাদন, মজুদ, সরবরাহ, পরিবহন ও বিপণন সম্পর্কে সতর্ক না হলে দেশে অতীতের চেয়ে বড় বিপদ ঘটা অসম্ভব নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা