এবার বন্ধ হোক
- ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:৪৭
সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার পর ফের বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের আলোচনা সামনে এসেছে। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার বিষয়টি বর্তমান সরকারের আমলে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। বিগত এক যুগে দুই হাজার ৮৮ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশে। জাতিসঙ্ঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে পরিসংখ্যানটি উত্থাপিত হয়েছে। দেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ‘ট্রিগার হ্যাপি বুলেটে’ এভাবে নিয়মিত মানুষজন প্রাণ হারাচ্ছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা বিচার চেয়ে কোনো প্রতিকার পান না। বরং যারা এমন অন্যায় কর্মকাণ্ডে সিদ্ধহস্ত তারা চাকরিতে পুরস্কৃত হচ্ছেন। সিনহাকে হত্যার নির্দেশদাতা ওসি প্রদীপ কুমারের বিরুদ্ধে অসংখ্য মানুষকে হত্যার অভিযোগের মধ্যেও পুরস্কৃত হয়েছেন তিন। কোনো অপরাধী পুরস্কৃত হলে যা হওয়ার তাই এখন হচ্ছে দেশে ।
সিনহাকে রাস্তায় হত্যার পর একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, আদালত এখন রাস্তায় নেমে এসেছে। আইন, বিচার ও আদালতের আর প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতির এমন অবনতি হঠাৎ করে হয়েছে; এমন নয়। বরং বলতে হবে একজন ঊর্ধ্বতন সাবেক সেনা কর্মকর্তার বিচারবহির্ভূত হত্যার কারণে বিষয়টা এভাবে সামনে আসতে বাধ্য হলো। কারণ, এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবাহিনী এসএসএফের সদস্য ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়ার পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবের চেয়ারম্যান সাবেক মেজর খন্দকার নুরুল আফসার বলেছেন, দীর্ঘ দিন ধরে চলা ক্রসফায়ার ও হারিয়ে যাওয়ার নেতিবাচক দিক প্রকাশ পাচ্ছে। তবে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশ বিপজ্জনক অবস্থা। কারণ সত্য কথা বলতে গেলে হত্যা গুম ও হয়রানির আশঙ্কা এখনো বিদ্যমান।
ওসি প্রদীপ কুমারের ব্যাপারে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, তিনি টেকনাফ থানার দায়িত্বে থাকা ২২ মাস সময়ে ওই থানায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণ হারিয়েছেন ১৭৪ জন। মাদক চোরাচালান রোধে অবাধে মানুষ হত্যার লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। একই সময় যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে মাদকের ব্যবহার ও চোরাচালান বন্ধ হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এত মানুষের প্রাণহানি কী কারণে? আরো জানা যাচ্ছে, প্রদীপ ছিলেন এলাকার মূর্তিমান ত্রাস। তিনি মূলত ‘ক্রসফায়ার’কে ব্যবহার করেছেন অর্থ কামানোর ধান্দায়। তার ওই সব অপকর্মের ফিরিস্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। ক্রসফায়ারের বেশির ভাগ ঘটেছে মেরিন ড্রাইভ এলাকায়। স্থানীয়দের কাছে এলাকাটি ‘ডেথজোন’ হিসেবে পরিচিত। পুলিশের পোশাকে তিনি পৈশাচিক কর্মকাণ্ড চালালেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো পুরস্কৃত হয়েছেন। সিনহা হত্যার পর পুলিশের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাতেও প্রদীপের দাপটের বিষয়টিও প্রকাশিত হয়। জেলার পুলিশ সুপার তার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। এভাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মধ্যে অপরাধের প্রতি ঝুঁকছেন অনেকে। অপরাধ করে পুরস্কার মিললে তাদের দাপট বাড়ে বৈ কমে না।
মেজার সিনহা হত্যার ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটিকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে বিবেচনা করে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হলে বিচারবহির্ভূত হত্যার যে সংস্কৃতি সেটি সম্ভব হবে না। এই বিচার নিয়েও মানুষের সংশয় রয়েছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অন্য দিকে অপরাধীদের প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ উল্টো। এর পরও মানুষ প্রত্যাশা করে, একদিন হয়তো বিচারবহির্ভূত হত্যার অবসান হবে। সে জন্য দরকার বর্তমান ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। যারা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজে জড়িত, তাদের সবাইকে শনাক্ত করা। পুরস্কার কিংবা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিংয়ের বদলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাহলে পুলিশসহ দেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মধ্যে প্রকৃত শৃঙ্খলা ফিরে আসতে পারে। সিনহার হত্যাকারী, নির্দেশদাতা ও অন্তরালের আরো কোনো পৃষ্ঠপোষক থেকে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা