অনলাইন ক্লাসের নীতিমালা দরকার
- ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:৪৬
দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনারোগী শনাক্ত ঘোষণার পর ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। মহামারীকালে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পাঠদান অব্যাহত রাখতে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ক্লাস চালুর নির্দেশনা দেয় সরকার। শিক্ষা কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকারি উদ্যোগে টেলিভিশনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ভোকেশনাল, মাদরাসার ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, সংসদ টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাসগুলো একেবারে প্রাণহীন। শিক্ষক নিজের মতো করে বলে যান, বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পেরেছে কি না; তা জানানোর উপায় নেই। আর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন প্লাটফরম ব্যবহার করে ক্লাস চালু করেছে। কিন্তু এভাবে পাঠ নিতে দীর্ঘ সময় টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে এবং হেডফোন ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে কান ও চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে তাদের। উচিত ছিল অনলাইন ক্লাস শুরুর আগেই এর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া। অবাক করা বিষয় হলো, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা এ সম্পর্কে কিছুই অবহিত নন।
অনলাইন ক্লাসের ধারণা পুরনো হলেও আমাদের দেশে ব্যবহার নতুন। করোনা মহামারীতে এ পদ্ধতি ব্যাপক হারে ব্যবহার শুরু হয়। এ পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কোনো গবেষণা বা সমীক্ষা হয়নি। ভিজুয়াল ক্লাসগুলোর ব্যাপ্তি কত সময় হবে, গ্রাফিক্স কী হবে, কোন ধরনের সাউন্ড ব্যবহার হবে সে সম্পর্কে এগুলো যারা পরিচালনা করছেন তাদের কারিগরি জ্ঞানেরও ঘাটতি আছে। যেকোনো প্রযুক্তির সুবিধা-অসুবিধা দু’টিই আছে। শুরুতেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে একটি গাইডলাইন করা উচিত ছিল সরকারের। দেখে শুনে মনে হচ্ছেÑ শুধু সস্তা বাহবা নেয়ার জন্যই বুঝি অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে।
লক্ষণীয় একটি বিষয় হলোÑ অনলাইনে ক্লাসের মাত্রাতিরিক্ত সময় নির্ধারণ, নিরস উপস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা এ মাধ্যমে ক্লাস করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। দিন দিন তাদের কাছে এর আকর্ষণ ফুরিয়ে আসছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে প্রতিদিন চার ঘণ্টা ক্লাস নেয়। একঘেয়েমিপূর্ণ একতরফা এসব ক্লাসে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে, ইন্টারনেটের গতি কম হলে ক্লাসের শব্দ ঠিকমতো শোনা যায় না। হেডফোন ব্যবহারের ফলে কান ও মাথায় গরম অনুভূত হয়। একজন শিক্ষার্থী কতক্ষণ কম্পিউটারে বসে থাকবে? এটা বড় ধৈর্যের বিষয়। কারণ, বিষয়ভিত্তিক একেকটি শ্রেণীর দশ-বারোটি করে লেসন অনলাইন থেকে দেখতে হয়। তিন-চার ঘণ্টা কম্পিউটারের পর্দায় দেখতে দেখতে চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। এসব সমস্যার মুখোমুখি হয়ে ইতোমধ্যে অনেককে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে হেডফোন ব্যবহার করা যাবে না। বিকল্প হিসেবে লাউড স্পিকার ব্যবহার করতে হবে। একটানা মনিটরে তাকিয়ে থাকা যাবে না। কিছুক্ষণ পরপর চোখকে দেখার বিরতি দিতে হবে।
দুর্যোগকালে কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই অনলাইন ক্লাস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। অনলাইন ক্লাস নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় যে যার মতো করে পরিচালনা করছেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, যেকোনো নতুন বিষয়ে শুরুতে নানা রকম ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেয়, এ ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। এ পদ্ধতি যেহেতু এখন প্রাত্যহিক ব্যবহার করতে হবে, তাই কারিগরি বিষয়, স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় খেয়াল রেখে কিভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়Ñ এ জন্য একটি নীতিমালা থাকা একান্তভাবে দরকার। যত দ্রুত পারা যায় এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা