তিন দশকেও কেন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি?
- ০৭ আগস্ট ২০২০, ০২:১৫, আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২০, ০২:১৫
কয়েক দশক অতিক্রান্ত হলেও ‘ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস’ নামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মিত হয়নি আজো। আরো কত দিন লাগবে এ বাঁধের মতো একটি জরুরি ব্যবস্থা নিতে, তা অনিশ্চিত। জানা গেছে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও ইস্টার্ন বাইপাস তৈরি না করায় দিন দিন সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর বন্যার ঝুঁকিতে থাকতে হয় রাজধানীর পূর্বাংশসহ পাশের এলাকাগুলোকে। এ বছর বন্যা গ্রাস করে নিয়েছে ঢাকার আশপাশসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। এবার দীর্ঘস্থায়ী ও ক্রমবর্ধমান বন্যার শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরীর পূর্ব পাশে বাঁধের আশু প্রয়োজন আগের চেয়ে আরো বেশি উপলব্ধি করা হচ্ছে।
একটি জাতীয় দৈনিকে মানচিত্রসহ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশেষত তুরাগ নদ এবং শীতলক্ষ্যা ও বালুর অতি প্লাবনে ঢাকার পূর্বাঞ্চলে নিয়মিত বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক ‘লালফিতা’, নকশা না থাকা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বারবার বদলানো, কথিত অর্থসঙ্কট, প্রভৃতি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বসহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। অপর দিকে, সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকার চতুর্দিকে প্লাবিত হওয়ায় এবং রজাধানীতে অসহনীয় জলাবদ্ধতা জন্ম দিচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের। এ অবস্থায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। মাস চারেক পরে ‘চূড়ান্ত’ ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হবে। অর্থাৎ চলতি বর্ষায় বন্যার আশঙ্কা এবং জনগণের ভোগান্তি আগের মতোই থাকবে। আর আলোচ্য ডিপিপি যদি আবারো পরিবর্তন করা হয়, তা হলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। জানা যায়, এই সড়ক এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে এটাকে বহুমুখী উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে চক্রাকার সড়কের সাথে চক্রাকার রেলপথের সুবিধাও থাকার কথা। পানিসম্পদ সচিবের মতে, ‘কারিগরি সমস্যা’ কাজটাকে বিলম্বিত করছে। প্রকল্পের সব কিছু নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থই ব্যয় করা হবে ভূমির অধিগ্রহণে। পাউবো সূত্র জানায়, তাদের স্টাডি রিপোর্ট অনুমোদন না করে ডিসি অফিস জানিয়ে দেয়, সিএস ম্যাপের সাহায্যে এটা করতে হবে। তাই নতুন স্টাডির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চার মাসে স্টাডি রিপোর্ট তৈরি করে ডিসি অফিসে জমা দেয়া হবে। এরপর জমি অধিগ্রহণের ব্যয় সম্পর্কে তারা জানালে ডিপিপি পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে। ‘সব কিছু যথাসময়ে করা গেলে’ আগামী বছর ইস্টার্ন বাইপাসের কাজ আরম্ভ হওয়ার আশ্বাস মিলেছে। তবে এ কাজ যদি শুরু হয়ও, তা সম্পন্ন করতে কত বছর লাগবে এবং তত দিনে নতুন কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা না দিলেও প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ কত বাড়বে, এসব বিষয় নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
স্মর্তব্য, ১৯৮৭-৮৮ সালের বন্যায় ঢাকার চার পাশ এবং রাজধানী নগরীর অনেক জায়গা ডুবে গিয়েছিল। সে অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এর পরই ঢাকার বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজে হাত দেয়া হয়। ঢাকা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে বাঁধের কাজ টঙ্গী থেকে মিরপুর-গাবতলী-মোহাম্মদপুর হয়ে রায়েরবাজার দিয়ে একেবারে লালবাগ পর্যন্ত শেষ করা গেলেও রাজধানীর পূর্বাঞ্চল আজো রয়ে গেছে বাঁধবিহীন, তথা অনিরাপদ অবস্থায়। তাই লাখ লাখ বাসিন্দাকে প্রত্যেক বছর বন্যার ঝুঁকির মধ্যে বর্ষা কাটাতে হয়। জানা গেছে, প্রথমে বিশ্বব্যাংক আগ্রহী হয়েও পরে সরে যায় ইস্টার্ন বাইপাস প্রকল্প থেকে। তদুপরি, আমলাতান্ত্রিকতা এবং শর্তের জটিলতায় জাপানের ‘জাইকা’ও ২০১৬ সালের পর পিছু হটেছে।
পাউবো জানিয়েছে, মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও যানবাহনের চাপ হ্রাসের লক্ষ্যে এই বাইপাস নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল অন্তত দু’দশক আগে। ঢাকার উত্তরে টঙ্গী খাল, দক্ষিণে ডেমরা রোড, পূর্বে বালু নদী আর পশ্চিমে প্রগতি সরণি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক নির্মিত হওয়ার কথা। এ জন্য ২০০০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৭০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পাকা করেছিল। তুরাগ তীরে তৈরি হয়েছিল কয়েক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। তবে অর্থাভাবে ২০০৩ সালে এসব কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বিশেষ করে, এবার করোনাকালে বন্যার বিস্তৃতি জনমনে অভাবিতপূর্ণ উৎকণ্ঠার সঞ্চার করেছে। অতিবর্ষণ ছাড়াই প্রধানত উজানের ঢলে রাজধানীর কিছু নিম্নাঞ্চলসহ চার পাশের এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে নগরীর পূর্বাংশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ শুরু করা হলে বন্যা প্রতিরোধ, যানজট হ্রাস এবং বিরাট এলাকায় নিরাপদ নগরায়ণ সম্ভব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা