২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সীমান্তের ওপার থেকে চালান আসছে

মাদক আগ্রাসনের সাথে আপস নেই

-

ভরা নদী পদ্মায় এখনো বানের পানি কমার কোনো লক্ষণ নেই। দু’তীর ছাপিয়ে তলিয়ে গেছে মাঠ-ঘাট, আবাদি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। উজানের ভয়াবহ বন্যায় অসংখ্য মানুষ আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছে। অথচ প্রমত্তা পদ্মা নদী এখন ভারত ও বাংলাদেশের মাদক চোরাকারবারিদের অবাধ বিচরণস্থল, তথা অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে উঠেছে। কারণ, ওপারের উজান থেকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয় মাদক পণ্যের বড় বড় চালান। ভাটিতে তা নির্বিঘেœ সরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাচার করে দেয়া হচ্ছে।
একটি জাতীয় দৈনিক প্রসঙ্গক্রমে জানিয়েছে, দেশে গঙ্গা বা পদ্মার প্রবেশমুখ শিবগঞ্জ থেকে বাঘা পর্যন্ত, বৃহত্তর রাজশাহী সীমান্তের দীর্ঘ নদীপথ বর্তমানে মাদক চোরাচালানের কাজে প্রায় বিনাবাধায় ব্যবহৃত হচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু ধরা পড়লেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজরদারির বাইরে মাদকের বাকিটা চালান হয়ে যাচ্ছে। ভারতে ফারাক্কা বাঁধের খানিকটা ভাটিতে একটি ঘাটে ভেলায় ভাসানো হচ্ছে বিড়ির পাতা ও মসলা এবং গাঁজা-ফেনসিডিলের বড় বস্তা। ওপার থেকে ফোনে জানিয়ে দিলেই এ দেশের মাদক কারবারিরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় টহল দিতে থাকে। মাত্র আধা ঘণ্টায় মাদকভর্তি ভেলা বাংলাদেশে চলে আসে। তখন মাদক নৌকায় করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। চরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, ভরা বর্ষায় এখন জলরাশি বিস্তীর্ণ। পদ্মার একূল-ওকূল দেখা যায় না। এত পানিতে এবং করোনা মহামারী থাকায় নদীতে নেই বর্ডার গার্ডের টহল। পুলিশ ও র্যাবের অভিযান কমে গেছে। এ সুযোগে উল্লিখিত কৌশলে মাদক পাচারের ধুম লেগেছে। সঙ্ঘবদ্ধ দুর্বৃত্তদের মাদক চোরাচালান বৃদ্ধির কথা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ আসনের এমপিও স্বীকার করেছেন। তিনি সম্প্রতি তিন কিলোমিটার ধাওয়া করে তিন মাদক পাচারকারীকে ধরে তুলে দিয়েছেন পুলিশের হাতে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন বাহিনীকে আরো তৎপর হতে নির্দেশ দেয়ার কথাও জানান তিনি।
জানা যায়, নাববগঞ্জের কোনো কোনো এলাকা এবং ভারতের সীমান্ত শহর লালগোলা বাংলাদেশে মাদক পাচারের প্রধান কেন্দ্র। গোয়েন্দা সূত্রের মতে, লালগোলায় আছে হেরোইন ও ফেনসিডিল বানানোর শতাধিক কারখানা। সেখানকার মাদকচক্রের লোকেরা নৌকায় করে সীমান্তে এসে, মাদকের চালান ভেলায় করে এ দেশে পাঠাচ্ছে। চোরাকারবারিরা জমজমাট কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দাদের মতে, রাজশাহীর গোদাগাড়ি হেরোইন পাচারের আন্তর্জাতিক রুট। এখানে অন্তত আড়াই শ’ চোলাচালানি এ কাজে তৎপর। করোনা ও বন্যা যেন ওদের জন্য ‘পোয়াবারো’ হয়েছে। মাদকের বিরাট চালানগুলো সাধারণত রাতের অন্ধকারে নিয়ে আসা হয়। গত ২৬ জুলাই রাতে রাজশাহী নগরীর প্রবেশদ্বারে ট্রাকবোঝাই মাদকসমেত কয়েকজন ধরা পড়েছে। কয়েক মাসে মাদকসহ শতাধিক বহনকারী ধরা পড়লেও মাদকের আসল কারবারিরা থেকে যাচ্ছে নিরাপদ।
ফারাক্কার ছয় কিলোমিটার ভাটিতে শিবগঞ্জের সীমান্ত থেকে ১৫৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এবং রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাতে পদ্মা নদী এ দেশে পুরোপুরি প্রবেশ করেছে। এ এলাকায় নদীর দু’পাশে আছে দু’দেশের শতাধিক গ্রাম ও চর, যা এখন পানির নিচে। অভিযোগ রয়েছে, ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশে গরু পাচারের বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় সক্রিয় হলেও মাদক পাচারের ব্যাপারে তারা রহস্যজনকভাবে নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশে মাদকপাচার বেড়ে গেছে। এ দিকে, বিজিবির স্পিডবোট বা দ্রুতগামী নৌযান না থাকায় তাদের টহল অপর্যাপ্ত। এতে মাদক চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য সহজ হয়েছে। রাজশাহীর ডিআইজি বলেছেন, ‘পুলিশসহ কর্তৃপক্ষ মাদক রোধে সদা সক্রিয়। তবে করোনাকালে পুলিশের ব্যস্ততার সুযোগে পাচারকারীরা সক্রিয় হতে পারে।’
দেশবাসীর প্রত্যাশা, মাদকরূপী ভয়াবহ আগ্রাসনের ব্যাপারে কোনো আপস করা হবে না। এ জন্য বিজিবিসহ সব বাহিনীর তৎপরতা যাতে পর্যাপ্ত ও কার্যকর হতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে অবিলম্বে।


আরো সংবাদ



premium cement