১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জাল নোটের ‘জাল’ ঈদে আরো বিস্তৃত!

এই দুর্বৃত্তদের ক্ষমা নেই

-

পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, এবারো ঈদুল আজহার বাজারে জাল মুদ্রার অসৎ কারবারিদের দুষ্টচক্র ছিল সক্রিয়। সাধারণত দুই ঈদে জাল নোটের ‘বিস্তৃত জাল’-এর ফাঁদে ফেলা হয় নিরীহ ও সাধারণ মানুষকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের দুর্ভোগ ঘটলেও আসল অপরাধী এবং এদের গডফাদাররা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার অনেকটা বাইরে। তা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতায় যে পরিমাণ ভুয়া নোট দেশে আটক করা হয়েছে, তা কম নয়। গত এক মাসেই উদ্ধার করা হয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকার জাল নোট। সংশ্লিষ্ট প্রতারকদের বেশি নজর এক হাজার টাকার, অর্থাৎ খুব বড়, নোটের দিকে। বিশেষত নির্দোষ কারো যেন আর হয়রানি না ঘটে, সে জন্য ‘জালমুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইন’ প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে।
প্রতি বছর কোরবানির পশুর হাটে জাল নোটের দৌরাত্ম্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে এবং গবাদিপশুর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা প্রতারিত হন বেশি। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিন ব্যাংকে জাল নোট ধরা পড়ছে। এতে জনমনে উদ্বেগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। জাল নোটের চক্র এতই বেপরোয়া আর সংগঠিত যে, প্রশাসনের যাবতীয় পদক্ষেপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা সারা বছর সম্ভাব্য সব স্থানে সক্রিয় থাকে। আটক জাল নোটের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এই নোট সংশ্লিষ্ট অপরাধচক্রের হাতে প্রতারিত ভুক্তভোগীর সংখ্যা। এ দিকে, বিগত দেড় বছরে প্রায় ২৭ হাজার জাল নোট ধরা পড়েছে। এটা টাকার হিসাবে প্রায় দেড় কোটি। গত ১৯ মাসে দেশে প্রায় ছয় কোটি টাকার জাল নোট আটক করা হয়েছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়, প্রতি বছর প্রতিটি ব্যাংকে ৪০০ থেকে ৫০০ জাল নোট শনাক্ত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, ২০১৯ সালে এবং গত জুন মাস পর্যন্ত চলতি বছরে প্রায় ১৭ হাজার জাল নোট ধরা পড়ে। এর মধ্যে এক হাজার টাকার জাল নোটই আছে ১২ হাজার ৪৫টি। অর্থাৎ মোট এক কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজারের মধ্যে এই বড় নোটই রয়েছে প্রায় সোয়া কোটি টাকার মতো। তা ছাড়া, এ সময়ে ৫০০ টাকার নোট তিন হাজার ৩১৮টি, ১০০ টাকার নোট ১৫৩ এবং ৫০ টাকার মূল্যমানের ৬২৯টি নোট ধরা পড়েছে। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে ধরা পড়া ১২৩১টি জাল নোটের ৭৪৯টিই এক হাজার টাকার নোট। অন্যগুলোর মূল্যমান ৫০০ বা ১০০ টাকা। মামলা হয়েছে ৪৮টি। এর আগে ২০১৯ সালে আটক হওয়া ১৫ হাজার ৭৬০টি জাল নোটের ১১ হাজার ৭০১টিই এক হাজার টাকার নোট। একই সময় পৌনে ২০০ মামলা দায়ের করা হয়েছে এ ব্যাপারে। এবার ঈদের আগে রাজধানীর দু’টি আবাস ভবন থেকে চার কোটি টাকার জাল নোটসহ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরো জানিয়েছে, বিগত দুই দশকে দেশে জাল নোট নিয়ে মামলার সংখ্যা আট হাজার ৩৬৬। তবে আজো দু’হাজারের বেশি মামলার তদন্ত শেষ হয়নি, বিচার দূরের কথা। এমন দীর্ঘসূত্রতার কারণ, সাক্ষীরা আদালতে না আসা এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ‘ইচ্ছাকৃত’ বিলম্ব ঘটানো। অন্য দিকে, আসামি পার পেয়ে গেলে আবারো একই অপরাধে লিপ্ত হয়।
আমরা মনে করি, প্রশাসনের কঠোরতা, নিয়মিত অভিযান এবং মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিলম্ব না করার বিকল্প নেই। এ ছাড়া, নিরীহ মানুষের ভোগান্তি নয়, প্রকৃত অপরাধী এবং তাদের চক্রকে যেন স্থায়ীভাবে দমন করা হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায়, জাল নোটের উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, সরবরাহ ও বিপণন কোনোটাই হ্রাস পাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement