২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
থানায় বোমা বিস্ফোরণ

‘জঙ্গি’ ইস্যু যেন দুর্ভোগ না বাড়ায়

-

‘জঙ্গিবাদ’ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য এক কষ্টকর অধ্যায় হয়ে আছে। বেশ কয়েক বছর ধরে এ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা লক্ষ করেছি। এর ফলে জান-মালের যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তার থেকে আরো বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষের। ‘জঙ্গি’ দমনের নামে সরকার নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছে। ওই সব অভিযানেও অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নিরপরাধ মানুষও হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অনেক ঘটনাই দেখা গেছে, যেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ‘জঙ্গিবাদ’ বা সন্ত্রাস বলে তকমা দিয়ে কঠোর অভিযান চালানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একচেটিয়া ওই সব কর্মকাণ্ডে সারা দেশের অসংখ্য মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন। হত্যা, খুন ও রাজনৈতিক হয়রানির কোনো প্রতিকার সাধারণ মানুষ পাননি। সরকার আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল শক্তি ক্ষয় করেছে। এরপরও আমরা দেখতে পাচ্ছি ‘জঙ্গি’ ঘটনার অবসান হয়নি।
সম্প্র্রতি জঙ্গি হামলার ফের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। ১৯ জুলাই সদর দফতর থেকে পুলিশের প্রত্যেক ইউনিটের প্রতি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। ওই বার্তায় জানানো হয়েছে, পুলিশকে টার্গেট করে বা পুলিশি স্থাপনায় হামলা হতে পারে। গত বুধবার ভোরে রাজধানীর পল্লবী থানার ভেতরে বোমা বিস্ফোরণে চার পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) থানায় বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে। সিরিয়া ও ইরাকে আইএস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে রীতিমতো একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় আমেরিকা দাবি করেছে। আইএসের সেই রাজ্যটিরও আবার পতন হয়েছে। রহস্যময় ব্যাপার হলোÑ সন্ত্রাসী হামলায় দায় স্বীকার করার কৌশল। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বোমা বিস্ফোরণের ব্যাপারে যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক সংযোগ থাকার কোনো আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।
পুলিশের বিবরণ থেকে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে পল্লবী থানার পুলিশ কালশী কবরস্থানে অভিযান চালিয়ে তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে দু’টি পিস্তল, চারটি গুলি ও ওজন মাপার একটি যন্ত্র পাওয়া যায়। থানায় এনে ওজন মাপার যন্ত্রটি নিয়ে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেটি নিয়ে তাদের সন্দেহ হলে পুলিশের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটকে খবর দেয়া হয়। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার ছিল, সে জন্য ইউনিটের অন্য সদস্যদের আসতে খবর দেয়া হয়। ইতোমধ্যে থানার ভেতর বোমার বিস্ফোরণ ঘটলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা আহত হন। বাহিনীর দায়িত্বশীল সদস্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেফতারকৃতরা সন্ত্রাসী। তারা স্থানীয় এক কাউন্সিলরকে হত্যা করতে পরিকল্পনা করছিল। এরা জঙ্গি নয়, এদের সাথে জঙ্গি নেটওয়ার্কের কোনো সংযোগ নেই। এরা স্থানীয় অপরাধ চক্রের সদস্য।
আশঙ্কার ব্যাপার হলোÑ পুলিশ সদর দফতর থেকে সতর্কতা জারির মধ্যেই থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সদস্যদের আহত হওয়ার যে বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে; তাতে তাদের সতর্কতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। আগাম সতর্কবার্তার পরও তারা যথেষ্ট প্রস্তুত ছিলেন এমন বলা যাবে না। যেখানে অপরাধীরা স্বীকার করছিল ওজন মাপার যন্ত্রটি বোমা, তারপরও অসাবধানতাবশত পুলিশ সদস্যরা সেটি নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন। যদিও বিস্ফোরণের ব্যাপারে পুলিশের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছেÑ এ কাজটি স্থানীয় অপরাধ চক্রের কর্মকাণ্ড। সাধারণ মানুষের মনে এ নিয়ে বরাবরের মতো রহস্য দানা বাঁধা স্বাভাবিক, কেন আইএসের পক্ষ থেকে এর দায় নেয়া হচ্ছে? ‘জঙ্গি’ শব্দটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার আশা করি, এ ধরনের রহস্যময় ব্যাপার মানুষের জন্য আবার না কোনো দুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠে। সে জন্য সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট সতর্কতা ও সাবধানতা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement