২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি

এবারো সঙ্কটের আশঙ্কা

-

গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির চামড়া নিয়ে দেশে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এ বছরও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। এবার চামড়ার দাম গত বছরের চেয়েও ২০ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম, বাংলাদেশী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এর চাহিদা হ্রাসের আশঙ্কা, বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের মান, দেশে চামড়ার মজুদের পরিমাণ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে এবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ২৮ থেকে ৩২ টাকা। ছাগলের চামড়ার দর ১৩-১৫ টাকা।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িত সব পক্ষই যাতে লাভবান হয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে আসছে সরকার। কিন্তু সত্য হলো, গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। চামড়ার বাণিজ্যে মূল ক্রীড়নক ট্যানারি মালিকরা। তাদের কারণেই দেশে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয় মানুষ। গত বছর ন্যায্য দাম না পেয়ে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলে প্রতিবাদ জানান। তখন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা দোষ দিয়েছেন পাইকারি ক্রেতাদের। আর পাইকারি ক্রেতারা বলেছেন, আড়তদাররা কম দামে চামড়া কিনছেন বলে তারাও মানুষকে কম দাম দিচ্ছেন। আড়তদাররা দাবি করেন, ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন বকেয়া পরিশোধ না করায় তারা যথাযথ দাম দিয়ে পাইকারি ক্রেতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনতে পারেননি।
অভিজ্ঞতার আলোকে সরকার ব্যবস্থা নেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার চামড়ার দাম নির্ধারণের সময় এর বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপের আভাস পাওয়া যায়নি। তাই এবারো চামড়ার বিপণনে গতবারের মতো বিরাট বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ এবং চামড়ার ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং একজন ট্যানারির মালিক গত বছর বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে ট্যানারি মালিকদের কাছে যে চামড়া মজুদ রয়েছে তা তারা রফতানি করতে পারেননি। এখন নতুন চামড়া কিনে কী করবে?’ ২০১৫ সালে করোনা মহামারী ছিল না। তখনই ট্যানারি মালিকরা চামড়া রফতানি করতে পারেননি। এর কারণ বিশ্ববাজারে চামড়ার চাহিদাহীনতা নয়। বরং বিশ্ববাজারে চামড়ার প্রচুর চাহিদা আছে। কিন্তু ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যে মানের চামড়ার চাহিদা, বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো সেই মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না বা করতে আগ্রহী নয়। সাভারের ট্যানারি পল্লøীতে যে কেন্দ্রীয় শোধনাগার আছে সেটি পুরো কার্যকর হয়নি। ফলে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে যে কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট দরকার হয়, সেটি পাচ্ছেন না রফতানিকারকরা। তারা ফটকাবাজারি করেই ব্যবসা কুক্ষিগত রাখতে চান। এ জন্য কমপ্লায়েন্সের প্রয়োজনও বোধ করেন না। গার্মেন্ট শিল্পের মতো আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপের মুখে না পড়ায় সরকারও চামড়া শিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়নি।
ট্যানারি মালিকরা যে ফটকাবাজারি করেই ব্যবসা ধরে রাখতে চান সেটি প্রমাণিত। গত বছর কোরবানির চামড়ার বাজারে বিপর্যয় দেখা দিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ঈদের পরদিনই ঘোষণা দেয়, কেউ যদি কাঁচা চামড়া রফতানি করতে চায় তাহলে তাকে অনুমোদন দেয়া হবে। ওই ঘোষণার পরদিনই ট্যানারি মালিকরা সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার নির্ধারিত দামেই তারা কাঁচা চামড়া কিনবেন।
চামড়াশিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া উচিত। তা না হওয়া পর্যন্ত কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ অবারিত রাখা হোক।

 


আরো সংবাদ



premium cement