২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি বেশি

মধ্যস্বত্ব¡ভোগীদের দমন করুন

-

বাংলাদেশসহ গোটা দুনিয়াতে চলছে ভয়াবহ ভাইরাস করোনার মহাতাণ্ডব। এতে বিশ্ববাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে অচল। এর বিরাট প্রভাব পড়েছে কোরবানির ঈদের ওপরেও। এ ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বহু জায়গায় কোরবানির পশু বিক্রয়ের হাট বসেছে। তবে করোনাকালের চরম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অন্যান্যবারের মতো গতানুগতিক পশুর হাট জমে উঠছে না। এতে প্রধানত খামারি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। অপর দিকে, জমে উঠেছে অনলাইনে ঈদুল আজহার গরু-ছাগল বেচাকেনার আয়োজন। মহামারী থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা প্রচলিত ধরনের পশুর হাটে সম্ভব নয় বিধায় অনেকেই সেখানে যাওয়া অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। তদুপরি, ঝামেলামুক্তভাবে এবং কোনো রকম ‘হাসিল’ ছাড়াই পছন্দের পশু কেনা যায় বলে অনলাইনের হাটের দিকেই কোরবানিদাতা মানুষের আগ্রহ বেশি। তবে এখানেও মুনাফাবাজ মধ্যস্বত্বভোগীদের উপদ্রব শুরু হয়েছে এবং কিছু প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
করোনা জীবাণুজাত ‘কোভিড-১৯’ মহামারীর সংক্রমণ যেন হতে না পারে, সে জন্য কোরবানির পশু হাটে না নিয়ে, বরং সরাসরি অনলাইন প্লাটফর্মে, অর্থাৎ ডিজিটাল মাধ্যমে যাতে বিপণন করা যায়, এ জন্য সরকার এবার উদ্যোগী হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে এবং ‘ফুড ফর নেশন’ ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট পশুখামার মালিকদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে কয়েক দিন আগেই। প্রান্তিক ও প্রকৃত খামারিদের অনেকেই পশুর ছবিসমেত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে বিক্রয়ের কাজ আরম্ভ করেছেন। তাদের সংখ্যা অন্তত কয়েক হাজার বলে জানা যায়।
সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাচ্ছে না। কারণ, খামারিদের পশুর ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করে মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালরা দৌরাত্ম্য শুরু করেছে। তারা সামাজিকমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে নিজেদের নামে। গ্রামের সরল ও নিরীহ কৃষকদের কোরবানির পশুর ছবি তুলে এবং তা অনলাইনে বিক্রি করে দেয়ার নামে কমিশন বাগিয়ে নিচ্ছে তারা। ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন প্রকৃত কৃষক ও খামারিরা। এ বিষয়ে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে জানানো হলে তারা আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ এবং আইসিটি ডিভিশনে খবর দিয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের শীর্ষ সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্থান থেকে এমন অভিযোগ আসছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আগেই বলা হয়েছে তারা যেন কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখেন।
জানা গেছে, ‘ফুড ফর নেশন’ নামের যে অনলাইন কৃষিবাজারের মাধ্যমে সরকার পশু বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছে, এটা গত ২৩ মে যাত্রা করেছে। খাদ্যশস্যসহ কৃষিজ পণ্যের সুলভ ও সুষ্ঠু বিপণন, ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা বিধান এবং জরুরি পরিস্থিতিতেও ‘খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলা’ চালু রাখার জন্য এর প্রতিষ্ঠা। এই প্লাটফর্মে কোরবানির পশুর জন্য পৃথক ‘অপশন’ রয়েছে। সেখানে নাম-ঠিকানা দিয়ে খামারিরা নিবন্ধিত হচ্ছেন। তবে ঢালাও নিবন্ধনের দরুন প্রতারণার সুযোগ থাকার অভিযোগ এসেছে। অবশ্য আইসিটি বিভাগের সচিব দাবি করেন, ‘নিবন্ধিত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তাই অনিয়ম করে পার পাওয়া যাবে না।’ এ দিকে ধূর্ত মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতারণা চলছে সুকৌশলে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, একজন মধ্যস্বত্বভোগী কিশোরগঞ্জের জনৈক কৃষকের পাঁচটি গরু বিক্রির নামে ৭৮ হাজার টাকা মেরে দিয়েছে।
সবার প্রত্যাশা, অনলাইনে পশু বিক্রির শুভ উদ্যোগ সফল করার জন্য অবিলম্বে কঠোরভাবে দমন করতে হবে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের। এ জন্য নিয়মিত কার্যকর মনিটরিং থাকা জরুরি। তা ছাড়া, খামারিদের সুনির্দিষ্ট তালিকার বাইরে নিবন্ধনরোধ, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত তৎপরতা, একই পশু খামার ও অনলাইনে একসাথে বিক্রি করার সুযোগ না থাকা প্রভৃতি নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement