২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
এক কিটে দুই করোনা টেস্ট

জীবন নিয়ে চলছে ছিনিমিনি খেলা

-

দেশে ৮০টির মতো ল্যাবে করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। এসব ল্যাবের দৈনিক টেস্ট করার সক্ষমতা ১৩ হাজার থেকে ১৯ হাজার। কিন্তু দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার টেস্ট করার মতো কিট সরবরাহ করতে পারছে না সরকার তথা স্বাস্থ্য দফতর। এরই মধ্যে কিটের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট ল্যাবগুলোর প্রায় অর্ধেকই স্বাস্থ্য দফতরের কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই বিকল্প পথ বেছে নিয়ে একটি কিট দিয়ে দু’টি নমুনা পরীক্ষা করতে শুরু করেছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই খবর দিয়ে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক কিটে দুই টেস্ট করা গ্রহণযোগ্য নয়। কাজটি কেবল অবৈজ্ঞানিক এবং অনৈতিকই নয়, এর ফলে ভুল ফলাফল আসার ঝুঁকিও রয়েছে। এভাবে পরীক্ষা করা হলে ভাইরাসটি আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তারপরও এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ল্যাবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে যা শেষ পর্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির ঘটনা কম ঘটেনি। এক দিকে রোগীদের জীবন নিয়ে টানাটানি, একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেও তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না এবং রীতিমতো বিনাচিকিৎসায় অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন তখন স্বাস্থ্য খাতের কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতির মহোৎসব জাতিকে হতাশার অতলে নিমজ্জিত করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এই অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, ব্যর্থতার কোনো জবাবদিহিতা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। এখন এক কিটে দু’টি টেস্ট করানোর মধ্য দিয়ে এই খাতে আরেকটি অরাজকতার চিত্র সামনে এসেছে।
যেসব ল্যাবরেটরিতে এক কিটে দু’টি টেস্ট করানো হচ্ছে সেগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, কিটের তীব্র সঙ্কটের কারণে তারা এক কিট দিয়ে দুই নমুনা পরীক্ষা করছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘মৌখিক পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে বলে কয়েকটি ল্যাবের কর্মকর্তা দাবি করেন। এটি একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির চূড়ান্ত নমুনা। লিখিত অনুমোদন ছাড়া সরকারি পর্যায়ে কোনো কাজ সম্পাদন হওয়া অকল্পনীয় একটি ব্যাপার। এখানে তো লাখো মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। কোভিড-১৯ পরীক্ষায় জাতীয় নির্দেশিকায় প্রতিটি নমুনা পরীক্ষার জন্য একটি কিট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা: নজরুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট পত্রিকাকে বলেন, এ পদ্ধতি তারা ব্যবহার করতে পারে না। তাদের একটি কিট দিয়েই একটি পরীক্ষা করতে হবে। ভুল ফলাফল এলে জাতির ক্ষতি হবে। সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়বে। বিপর্যয় বয়ে আনবে। তিনি বলেন, সরকারের গাফিলতির কারণে কিট সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাঁচ লাখ কিট আনার পরামর্শ দিয়েছে পরামর্শক কমিটি। ঠিকাদারদের টাকা পরিশোধ না করায় তারা কিট এনেও সরবরাহ করছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা: বে-নজির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) ছাড়াই এ জাতীয় কাজ করা অবৈজ্ঞানিক ও অনৈতিক। রোগীর জীবন মরণের বিষয়। এটা করার সুযোগ নেই। এ কারণে ভুল ফলাফল আসতে পারে এবং এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের কাছে দেশবাসীর জীবনের যে বিন্দুমাত্রও দাম নেই তার প্রমাণ তারা বারবার নানাভাবে দিয়েছেন। সবশেষ কিটের সঙ্কটের মধ্য দিয়ে তা আবারো স্পষ্ট হলো। আমাদের কী পরিমাণ লোক কত দিনে সংক্রমিত হতে পারে এবং দৈনিক কতগুলো টেস্ট করা হলে মাসে কত কিট লাগবে এ হিসাব জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি দিয়েছে। তারা পাঁচ লাখ কিট আমদানির কথা বলেছে। সেই পরামর্শ মতো অর্ডার দিয়ে কিট আনাও হয়েছে। কিন্তু সরকার ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ করছে না। তাই ঠিকাদাররাও কিটগুলো হস্তান্তর করছে না। মানুষের জীবন নিয়ে এর চেয়ে বড় অবহেলা, ছিনিমিনি খেলা আর কী হতে পারে?
এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অবিলম্বে অবসান হওয়া উচিত। একটি কিটে একটি নমুনাই পরীক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ গিনিপিগ বানিয়ে যেমন ইচ্ছা টেস্ট করবেন এটা এই মুহূর্তে বন্ধ করা হোক।


আরো সংবাদ



premium cement