কর্তৃপক্ষ কখন দায়িত্ববান হবে
- ২২ জুলাই ২০২০, ০০:০০
বর্ষার বৃষ্টিপাতে রাজধানী ঢাকা শহর জলাবদ্ধ এবং রাস্তাঘাট ও নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। অনেক এলাকায় প্রধান সড়ক কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জলাবদ্ধতার চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই এটি বাংলাদেশের রাজধানী শহর। যানবাহনের চলাচল, মানুষজনের বিক্ষিপ্ত আনাগোনা, মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় ভবনের কারণে অনুমান করা যাচ্ছে এটি একটি শহর। বৃষ্টিপাতে রাজধানীর এই পরিণতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি সাধারণ চিত্র। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে গরম আলোচনা এবং নাগরিক সমাজে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। প্রতিশ্রুতি দেন, এই সমস্যা আর থাকছে না। বছর ঘুরে আবারো আগের চেয়ে খারাপ অবস্থা। আবারো একই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আওড়ানো হয়। কেউবা অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে কেটে পড়তে চান। বাস্তবে নগরবাসী বর্ষায় বিষম ভোগান্তিতে রয়েছে।
সোমবার রাজধানীতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টায় ৬৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে ঢাকা শহরের বড় একটা এলাকা তলিয়ে যায়। বৃষ্টিপাত পরের দিন মঙ্গলবারও অব্যাহত থাকে। প্লাবিত রাস্তাঘাটের অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। চলাচলকারী মানুষের দুর্দশা অবর্ণনীয়। কোমরসমান পানি পাড়ি দিয়ে মানুষ জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে এসেছে। তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় যানবাহন চলছে চরম ঝুঁকি নিয়ে। সড়কে পানিতে ডুবে যানবাহন বিকল হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর জলাবদ্ধতার আরো অবনতি হবে। আরো বেশি বৃষ্টিপাত হলে সারা দেশের বন্যার সাথে রাজধানী গভীর পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। উত্তর দিক থেকে বন্যার পানি সংযুক্ত হয়ে ১৯৮৮ সালের মতো আবারো দীর্ঘ বন্যার মধ্যে পড়ে যেতে পারি আমরা।
কেন ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এতটা ভঙ্গুর? এই আলোচনা বরাবরের মতো উঠছে। এ প্রসঙ্গে পলিথিনের নির্বিচার ব্যবহারের বিষয়টি আসতে পারে। দায়িত্বশীল মন্ত্রীও কথাটি বলেছেন। ঢাকায় বক্স কালভার্টের ভেতর হাজার হাজার টন বর্জ্য জমে আছে। এই বর্জ্যে প্রধানত পলিথিন আছে। এটি পচে না, তেমনি অন্যান্য বর্জ্যকেও আটকে রাখে। প্রতিদিন ঢাকা শহরে শত শত টন পলিথিন বর্জ্য জমা হয়। এর বিরাট একটা অংশ অন্যান্য বর্জ্যরে সাথে রাজধানীর সরু খালে পতিত হচ্ছে। শহরের অন্য খাল ও ঝিলগুলোতে জমা হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের পথে বাধা তৈরি করছে। কয়েক বছর ধরে সারা দেশেই পলিথিন ব্যবহার অত্যধিক বেড়ে গেছে। বাজারের মাছ শুঁটকি থেকে শুরু করে কম্পিউটারও আমরা পলিথিন ব্যাগে মুড়িয়ে বহন করছি। ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ টন পলিথিন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এটি শুধু পানি নিষ্কাশনে বাধা দিচ্ছে তা নয়, শেষ করে দিচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। তবুও আমরা সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখছি না।
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে ওয়াসার নেতৃত্বে মোট ছয়টি কর্তৃপক্ষ কাজ করে থাকে। তবে বিভাগগুলোর মধ্যে কাজ নিয়ে সমন্বয় নেই। জলাবদ্ধতা তৈরি হলে একটি কর্তৃপক্ষ অন্য কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে। ওয়াসার অধীনে ৩৮৫ কিলোমিটার বড় নালা, ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট এবং প্রায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২৬টি খাল আছে। এগুলো কখনো সঠিকভাবে সংস্কার করা হয়নি। খবরে জানা যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকায় ওয়াসার দুটি প্রকল্প চলমান। এগুলোর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় শেষপ্রান্তে এসে গেলেও একটির মাত্র ১৯ দশমিক ১৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে; অন্যটির মাত্র দেড় শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ওয়াসার কর্মকাণ্ডের এই বেহাল দশা কখনো যেন শেষ হওয়ার নয়।
রাজধানী ঢাকা পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়েছে। প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা না বেড়ে এর আকার আয়তন বেড়েছে। তার ওপর দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর অবহেলা যোগ হয়েছে। বৃষ্টির পানি তাই সরছে না। পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম লাভজনক প্রকল্প হয় না। তাই এর দিকে সংশ্লিষ্টদের নজর নেই। এদিকে অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে ঢাকা। মহানগরীর এই দুরবস্থা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এর একটা উপযুক্ত সমাধান চাই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দরকার। সত্যিকার অর্থে রাজধানীর নালাগুলো এমনভাবে সংস্কার করা উচিত যেন বৃষ্টি হলেই পানি নিচের দিকে চলে যায়। আশা করা যায়, কর্তৃপক্ষ জনগণের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে সবার মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা