১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বেকার মানুষ সপরিবারে ঢাকা ছাড়ছে

প্রতিকারের পদক্ষেপ নিতে হবে

-

বেশ কিছু দিন ধরে পত্রপত্রিকায় প্রায় নিয়মিত ছাপা হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের রাজধানী ত্যাগ করে মফস্বলে নিজ নিজ এলাকায় চলে যাওয়ার খবর ও ছবি। তাদের একটা বিরাট অংশই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে সপরিবারে এবং বাসার যাবতীয় জিনিসপাতি নিয়ে। এ প্রসঙ্গে একটি পত্রিকার শিরোনামÑ ‘রাজধানীজুড়ে ঝুলছে টু-লেট আর টু-লেট, গ্রামের বাড়িতে গিয়েও মিলছে না কাজ।’ এ দিকে, ঢাকার বাড়িওয়ালাদের অনেকে ভাড়া কমিয়ে দিয়েও ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না। অপর দিকে, করোনার ছোবলের পাশাপাশি বন্যার পানি গ্রাস করে নিয়েছে গ্রাম-বাংলার বিরাট অংশ। সেখানেও ঘরে ঘরে অভাব অনটন। একটি পত্রিকা করোনাকালে কাজ হারানো, আয়হীন ও দিশাহারা মানুষের কথা তুলে ধরে লিখেছে, ‘চলমান মহামারীর তাণ্ডবে দেশের এক থেকে দেড় কোটি পরিবার গরিব হয়ে গেছে। শহুরে জীবনের ব্যয় বহনের সামর্থ্য আর না থাকায় ১৫-২০ শতাংশ মানুষ চলে গেছে গ্রামে।’ অথচ তাদের বেশির ভাগই অন্তত কয়েক বছর কাটিয়েছে এ শহরের বুকে। ভালোভাবে বেঁচে থাকার বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে তারা গ্রাম থেকে এসেছিলেন পরিজন নিয়ে। এখানে আয়-রোজগারের একটা উপায় করে তারা প্রায় স্থায়ীভাবে শহুরে হয়ে গিয়েছিলেন।
ঢাকার জাতীয় দৈনিকগুলোতে অনেক দিন ধরে ছাপা হচ্ছে দেশের মানুষের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, অভাব আর বিপন্ন ভবিষ্যতের কথা। সচিত্র সংবাদ ছাপা হচ্ছে মহানগরী থেকে প্রতিদিন দলে দলে স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষের গ্রামে প্রস্থানের বিষয়ে। সেই সাথে আছে ঢাকার সর্বত্র ‘টুলেট’ সাহেবের অসংখ্য বাড়ি থাকার সে পরিচিত গল্পের দুঃখজনক বাস্তব চিত্র। যেখানে দু’বেলা খাওয়ার খরচ বহনের নেই উপায়, সেখানে কর্মহীন মানুষ ফ্ল্যাট দূরের কথা, বস্তির ভাড়া জোগানোও তাদের জন্য কঠিন। ঘরের মালিকরা ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটেদের ধরে রাখতে পারছেন না। কারণ, তারা কাজ হারিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন এবং শহরে দীর্ঘ দিনের আবাস আর সংসার গুটিয়ে এবং ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ইতি টেনে বাস-মিনিবাস কিংবা লঞ্চে করে ছুটছেন গ্রামের দিকে। কিন্তু সেখানেও তাদের জন্য অপেক্ষা করছে দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তা। অনেকে তো গ্রামে গিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও পাচ্ছেন না। অনেকের ভিটেমাটি ছাড়া সেখানে নেই কোনো জায়গা-জমি। সেখানে তারা কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, কিভাবে চলবেনÑ এসবের কোনো সুরাহা না মিললেও জীবিকাহীন নিষ্ঠুর নগর থেকে যেন পালানোর পথ খুঁজছেন।
রাজধানী ঢাকা অতিরিক্ত জনভারে ক্লিষ্ট এবং অধিক জনসংখ্যা এ নগরের অধিক সমস্যার একটা বড় কারণÑ এমনটাই আমরা প্রায়ই বলে থাকি। এটাও সত্যি, গোটা দেহের রক্ত মুখে জমে ওঠা যেমন সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ নয়, তেমনি সারা দেশের মানুষ রাজধানীর দিকে ছুটে আসা জাতির জন্য কোনো সুখবর হতে পারে না। তবে এখন যে অসংখ্য মানুষ ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তা অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক। কারণ, এই মানুষেরা বছরের পর বছর এই শহরে ছিলেন এবং এখানেই একটা কাজ জুটিয়ে পরিবার নিয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক মাসে করোনাঘটিত দুর্যোগ কেড়ে নিয়েছে তাদের জীবিকা; ফলে তাদের জীবন হয়ে পড়েছে বিপন্ন। গ্রামে ফিরে গেলেও যে তারা ভাইরাসের কবল থেকে নিজেদের জীবন বাঁচাতে পারবেন, এর নেই গ্যারান্টি। তবু মানুষগুলোর আশা, জটিল এই নগরজীবন তাদের বিমুখ করলেও পল্লী জীবনের সরলতা তাদের ফিরিয়ে দেবে না।
এ প্রত্যাশা পূরণ কতটুকু হওয়া সম্ভব, সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, অবিলম্বে গ্রামমুখী জনস্রোত বন্ধ করার জন্য সরকার নাগরিকদের উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা জীবিকার নিশ্চয়তা দেয়া কর্তব্য। অন্তত তাদের জীবন রক্ষার সমূহ ব্যবস্থা শিগগিরই করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement