২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
টিউশন ফি নিয়ে বিশৃঙ্খলা

সরকারের মধ্যস্থতা প্রয়োজন

-

করোনার কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় দেশের শিক্ষাকার্যক্রম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। কখন ফের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হবে; তাও অনিশ্চিত। তবে এর মধ্যে ছাত্রদের বেতন দেয়া নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরোধ চলছে। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ জটিলতা গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এই দুর্যোগে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যয় বহন করতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি হয়ে গেছে। টিউশন ফি নিয়ে অভিভাবক ও স্কুল কর্র্তৃপক্ষের মধ্যে এই বিরোধ সব পক্ষের জন্য ক্ষতি বাড়াবে বৈ কমাবে না। এ ব্যাপারে উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা হওয়া দরকার। টিউশন ফি নিয়ে যেভাবে বিরোধ বেড়ে চলছে তাতে মনে হচ্ছে, দেশে কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
বেসরকারি স্কুলগুলো চালাতে মালিকদের বড় ধরনের খরচ করতে হয়। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাড়াবাসায় পরিচালিত হয়। এর সাথে রয়েছে ইউটিলিটি বিল। বন্ধ থাকলেও ন্যূনতম বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। একই সাথে অন্য সব বিলও পরিশোধ করতে হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে স্কুলের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন। করোনাকালে কিছু স্কুল নিয়মিত বেতনভাতা পরিশোধ করছে। কিছু স্কুল আংশিক পরিশোধ করছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান বেতন পরিশোধ করতে পারছে না কিংবা এ সুযোগে নিয়মিত বেতন দিচ্ছে না। স্কুলের পড়াশোনা যেহেতু হয়নি, সে জন্য বেতন দিতেও আগ্রহী নন অনেক অভিভাবক। অনেকেই ব্যাপারটি বিবেচনা করতে রাজি নন, ইচ্ছা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ করে রাখেনি। এই সময়ের মধ্যে স্কুলের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ভরণ পোষণে স্কুলে তাদের চাকরির ওপরই নির্ভরশীল। অভিভাবকরা যদি নিয়মিত বেতন পরিশোধ না করেন তাহলে স্কুলের ওপর নির্ভরশীল এসব মানুষের জীবিকা আসবে কোথা থেকে। এ ব্যাপারে দায়িত্বইবা কার? এ প্রশ্নের সমাধান দরকার।
এই দুর্যোগের মধ্যে অভিভাবকদের অনেকের আয়-উপার্জন কমে গেছে, কারো একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে অনেকে রয়েছেন সচ্ছল। দুর্যোগে তাদের আয় উপার্জন কমেছে ঠিক; কিন্তু স্কুলে পড়াশোনা করা সন্তানদের বেতন পরিশোধ করতে অক্ষম হয়েছেন এমন নয়। এখানে কয়েক শ্রেণীর অভিভাবককে আমরা দেখতে পাচ্ছি। একইভাবে সচ্ছলতার দিক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি অনেক শক্ত। প্রতিষ্ঠিত এসব স্কুল ছাত্রদের কাছ থেকে বেতন না নিলেও প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ব্যয় চালিয়ে যেতে পারবে। এ ধরনের স্কুল যদি ছাত্রদের বেতন ছাড় দেয়, কোনো সমস্যা তাদের হবে না। আরো কয়েক ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান কয়েক মাস যদি ছাত্রদের বেতন না পায় তাহলেও স্কুল চালিয়ে নিতে পারবে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠান রয়েছে ছাত্রদের দেয়া নিয়মিত টিউশন ফি’র ওপর নির্ভরশীল। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।
বেতনভাতা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মধ্যে যে রশি টানাটানি চলছে এর একটি যুতসই সমাধান প্রয়োজন। সমাধান হতে হবে স্কুলের সামর্থ্য ও অভিভাবকদের সমস্যা মাথায় রেখে। স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অভিভাবক সবাই জটিলতার মধ্যে নিপতিত। মাঝখানে কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ না থাকায় অন্যায়কারীদের সুযোগ বাড়ছে। এতে করে অন্যায়কারী কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে অভিভাবক ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঠকাবে। আবার অনেক কর্তৃপক্ষ পড়েছেন বিপদে। সমাধান না পেয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষাকার্যক্রমই চালু রাখতে পারবে না। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকেই একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে সঙ্কট উত্তরণে একটি সহনীয় ব্যবস্থা পাওয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement