কেমন হতে পারে করোনা-উত্তর বিশ্ব?
- ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০
করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্ব একরকম অবরুদ্ধ। বাড়ছে বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু। অন্য দিকে ঘরে বন্দী থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ। সবাই আশা করছে হয়তো আর কিছু দিনের মধ্যে এই মহামারীর অবসান ঘটবে। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাইরে বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করতে পারবেন; আবার স্বাদ পাবেন চিরচেনা সেই বন্ধনহীন জীবনের। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, বিশ্বের কোনো নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা বিজ্ঞানী এমন কোনো সুখবর দিতে পারছেন না। বরং উল্টোটাই বলছেন। তাদের কথা হলো, বিশ্ববাসীকে সম্ভবত দীর্ঘ মেয়াদে করোনার সাথে বসবাস করতে হবে। বিজ্ঞানীরা আরো মনে করেন, ২০২০ সালে করোনাভাইরাস যা করেছে, ভবিষ্যতে নতুন ও একই ধরনের ভয়াবহ কোনো রোগ মানবতাকে পঙ্গু করে ফেলতে পারে। মূলত এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে বিশ্বটাকে নতুন করে সাজানো এবং করোনা সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করে কিভাবে মানুষ কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসতে পারে সেই পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেছেন অনেকেই।
করোনা হয়তো চলে যাবে একসময়, কিন্তু তার পর কি সেই আগের বিশ্ব ফিরে পাবো আমরা? সেই আগের রাজনীতি, সেই অর্থনীতি, যুদ্ধের বীভৎসতা, দেশে দেশে সহিংসতা আর ষড়যন্ত্রÑ এগুলোই কি চলতে থাকবে? এসব প্রশ্ন এখন বিশ্বের চিন্তাবিদ, ভাবুকদের মাথায়। সবাই একমত, বিশ্ব আর আগের মতো থাকবে না। তবে কী কী পরিবর্তন ঘটবে বা কিভাবে ঘটবে সে বিষয়ে নানা মুনির রয়েছে নানা মত। অনেকে আশার বাণী শোনাচ্ছেন; অনেকে হতাশার। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে, সে বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। স্থায়ী পরিবর্তন ঘটবে রাজনীতিরও। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ অবসানের প্রস্তাব দিয়ে এরই মধ্যে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বিবৃতি দিয়েছেন এবং তাতে শতাধিক দেশ সমর্থন জানিয়েছে। বিশ্বের নেতৃত্ব গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের অনীহার প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যবস্থা চীনকেন্দ্রিক হতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
কোনো কোনো চিন্তাবিদ বলছেন, করোনা মহামারীর পর বিশ্বঅর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেবে। উৎপাদনশীলতার নিম্ন প্রবৃদ্ধি ঘটবে, বেসরকারি বিনিয়োগ থেকে লভ্যাংশ হ্রাস পাবে, সঙ্কটজনক পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর সাথে অন্যান্য দেশের ব্যবধান আরো বাড়বে, পৃথিবী মার্কিন ডলারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের তোড়ে অনেক দেশ নিজেদের অন্যান্য দেশ থেকে বিযুক্ত করে ফেলবে। অর্থাৎ গ্লোবালাইজেশনের বিপরীত স্রোত সক্রিয় হয়ে উঠবে। তবে এর ফলে পূর্ণাঙ্গভাবে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জিত হবে, এমন আশাও কম।
আপাতত বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নগর পরিকল্পক ও প্রশাসকরা মানুষের জন্য নতুন করে সাজাতে চাইছেন নিজেদের নগরটিকে। সর্বসাধারণের চলাচলের বা ব্যবহারের জায়গাগুলো এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করতে চাইছেন যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও মানুষ সমবেত হতে পারে; বিনোদনের বা অন্তত স্বাভাবিক স্বস্তিকর জীবন কাটানোর একটু সুযোগ নিতে পারে। কারণ গবেষণা বলছে, কোয়ারেন্টিনে একা থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে। বিচ্ছিন্ন থাকলে তার মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে। এ জন্যই মানুষের জন্য সামাজিক মেলামেশার জায়গাটি নিরাপদ করে গড়ে তোলার কাজ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন কেউ কেউ। অনেকে মনে করছেন, ঘরে বসে কর্মীরা যাতে কাজ করতে পারেন, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য অফিসের আকৃতি ও কর্মপরিবেশ পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে। যেমনÑ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার ভাবছে তাদের সব কর্মীই ঘরে বসে অফিসের কাজ করুক। অনেক কোম্পানি অফিসের আকার ছোট করার কথা ভাবছে।
ভিন্নমতও আছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ নিয়োগদাতা বলেছেন, কর্মীরা বাড়িতে থেকে কাজ করলে কাজের সমন্বয় করতে অসুবিধা হয়। ৬৫ শতাংশ নিয়োগদাতার মতে, কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আবার অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের গবেষণায় উঠে এসেছে, ৬৪ শতাংশ কর্মী বাসায় থেকে কাজ করছেন। এতে বলা হয়, বাসায় বা দূর-দূরান্তে থেকে কাজ করাটা একটি বিকল্প হিসেবে ব্যাপক স্বীকৃতি পাচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা