পদক্ষেপ নিন
- ১২ জুলাই ২০২০, ০০:০০
পুরান ঢাকা থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরসহ নানা জটিলতায় ধস নেমেছে দেশের দ্বিতীয় সম্ভাবনাময় রফতানি খাত চামড়া শিল্পে। করোনা সংক্রমণ শুরু হলে আরেক দফা হুমকিতে পড়ে যায় শিল্পটি। রফতানি বন্ধ থাকা, কাঁচা চামড়া পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে চামড়া শিল্প। ফলে সম্ভাবনাময় এই খাত নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে। রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪১ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) এ খাতে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি আয় কমেছে ২৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া খাতে মোট রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার, বিপরীতে আয় হয়েছে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ আয় কমেছে ২৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে আয় কমেছে দুই হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চামড়াজাত পণ্যে রফতানির প্রবৃদ্ধি কমেছে ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ, চামড়ায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪০ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে ফুটওয়্যার রফতানিতে।
ট্যানারি মালিকদের সংগঠনগুলোর সূত্রমতে, করোনার প্রভাবে চামড়ার প্রধান বাজার চীন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, হংকংসহ বেশির ভাগ দেশে চামড়াজাত পণ্য রফতানি বন্ধ। ফলে তিন হাজার থেকে ২০০ কোটি টাকার চামড়া পড়ে আছে ট্যানারিগুলোতে অবিক্রীত অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে আসছে কোরবানির ঈদ। প্রতি বছর ঈদুল আজহায় দেশে এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানি দেয়া হয়। ট্যানারিগুলো এই সময়েই চাহিদার মোট ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চামড়া ব্যবসায়ীদের থাকে বাড়তি প্রস্তুতি; কিন্তু এবার কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে চামড়া সংগ্রহ করা হবে, তা নিয়ে চিন্তিত সবাই। চামড়া শিল্পের অবস্থা আঁচ করতে পেরে ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে কোরবানির চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের সহজ শর্তে ৩ শতাংশ সুদে ৫-৬ শ’ কোটি টাকা ক্যাশ ক্রেডিট দেয়ার পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে পুনঃঅর্থায়ন করা না হলে চামড়া শিল্প ফের বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে। সরকারি তরফ থেকে যে ঋণসহায়তার কথা বলা হচ্ছে, তাতে চামড়া ক্রয়ে কিছু ব্যবসায়ী সাময়িকভাবে উপকৃত হবেন; কিন্তু চামড়া খাতে সার্বিক কোনো প্রভাব পড়বে না। ব্যাংকগুলো শুধু নিয়মিত গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছে। স্বল্পমেয়াদি এসব ঋণ অনেকেই পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে তারা এবারো ঋণ পাবেন না। এ জন্য এই খাতে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণসহায়তার দাবি করছেন তারা। তা না হলে এ বছর অনেকে চামড়া কেনা থেকে বিরত থাকতে পারেন। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় গত বছর চামড়া ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে প্রান্তিক বিক্রেতা অনেকে পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
আমরা মনে করি, চামড়া শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে ট্যানারি মালিকদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে প্রণোদনা দরকার। তবে এর আগে ট্যানারি মালিকদের এই শিল্পের সার্বিক অবস্থার হিসাব দিতে হবে। কত টাকার চামড়া নষ্ট হয়েছে; কত টাকার চামড়া মজুদ আছে; সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ট্যানারি মালিকদের গাফিলতি রয়েছে। অন্য দিকে তারা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অল্প দামে চামড়া কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে মজুদ করে থাকেন। কিন্তু ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে যত আপত্তি। এ অবস্থায় তারা ঋণ মওকুফ চান, ‘মোরাটরিয়াম’ সুবিধা চান; কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য যে বিশেষ ঋণসুবিধা দেয়া হচ্ছে; এর সুষ্ঠু ব্যবহার আগে নিশ্চিত করতে হবে। এই ঋণ থেকে যারা যে পরিমাণ অর্থসহায়তা পাবেন ট্যানারি মালিকেরা তা দিয়ে যদি সঙ্কট মোকাবেলা করতে না পারেন, তাহলে বিকল্প অবশ্যই ভাবতে হবে। তবে তার আগে তাদের হিসাব দিতে হবে যে, কী পরিমাণ চামড়া ট্যানারিগুলোতে জমা আছে। ক্ষতির পরিমাণইবা কত। এটি সত্য যে, আগের বছরই ট্যানারিগুলোতে অনেক চামড়া জমা হয়েছে। এর মধ্যে কোরবানি চলে আসছে আবার। চামড়া যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সে জন্য তাদের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে।পদক্ষেপ নিন
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা