২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুর্ভিক্ষে বিপুল প্রাণহানির পূর্বাভাস

ত্রাণসহায়তা বাড়াতে হবে

-

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফার্ম জানিয়েছে, খাদ্যাভাবে বিপুল মানুষ প্রাণ হারাবে। তাদের হিসাবে দৈনিক ১২ হাজার মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। আফ্রিকার কয়েকটি দরিদ্র দেশের পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলায়ও ক্ষুধায় মানুষের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কার কথা তারা বলেছে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকলেও বর্তমান দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখানে মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না। এ অবস্থা সামনে আরো খারাপ হতে পারে। খাদ্যাভাব বা দুর্ভিক্ষের মূল কারণ অনেক সময় খাদ্যশস্যের অপর্যাপ্ততা নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক বণ্টন ব্যবস্থার অভাবে মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়ে যায়। সাম্প্রতিককালে অনেক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। করোনা থেকে যে নতুন সঙ্কটের শুরু হয়েছে তা থেকে খাদ্যাভাবের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা থেকে মানুষ পরিত্রাণ হয়তো পেতে পারে। তা হতে পারে খাদ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা ও সুষম বণ্টনের মাধ্যমে।
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্যাভাবের কারণে প্রতিদিন ১২ হাজার পর্যন্ত মানুষ মারা যেতে পারে। তাদের বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যারা দিন আনে দিন খায় তারা এই সঙ্কটের শীর্ষে রয়েছে। খাদ্যসঙ্কটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ইয়েমেন, কঙ্গো, আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, সুদান ও হাইতি। দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি এমন দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, বিশ্বে ত্রাণ কমে আসা, ভয়াবহ বেকারত্ব ও খাদ্য সরবরাহে বিঘœœ সৃষ্টি হওয়াকে। এ বছরের শেষপ্রান্তে অনাহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে ১২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। ওই প্রতিবেদনে তারা করোনাভাইরাসের মৃত্যুর সাথে আসন্ন দুর্ভিক্ষে মানুষ মারা যাওয়ার একটি তুলনামূলক চিত্র দিয়েছে। তাতে তারা বলেছে, এপ্রিলে করোনাভাইরাসে প্রতিদিন গড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে। ওই সময় গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ মারা গেছে। অনাহারে মানুষ মারা যাওয়ার হার তার চেয়ে আরো দুই হাজার বেশি হবে।
১০টি দেশকে ক্ষুধার হটস্পট হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এদের মধ্যে তিনটি দেশে এর প্রকোপ হবে সবচেয়ে বেশি। দেশগুলো হলোÑ যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান। আফগানিস্তানে নতুন করে ১০ লাখ লোককে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরে ২৫ লাখ মানুষ খাদ্যাভাবের মুখোমুখি ছিল। ২০২০ সালের মে মাসে এমন মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ লাখ। করোনার সাথে মানুষের সৃষ্ট নানা ধরনের বিপদ খাদ্যাভাবকে আরো কঠিন করে তুলবে। বিশেষ করে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া এবং সাহায্য বন্ধ বা সঙ্কুচিত করে ফেলা এর অন্যতম কারণ। অন্য দিকে, ইরানের মতো দেশের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রাখা এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের দেশ ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলো ক্ষুধা-অনাহারের কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।
আমরা জানি, সঙ্কটের সময় সামান্য খাবারও যদি অনেকে সমান ভাগ করে আহার করে সবার ন্যূনতম প্রয়োজন মেটে। করোনার মতো বড় বড় বিপদে মানুষ যখন পড়েছে, এমন সহযোগিতামূলক সম্পর্ক কমই বিশ্ববাসী দেখাতে পেরেছে। বরং দেখা গেছে, সঙ্কটে পড়ার অজুহাতে করা হয় মজুদ। খাদ্য পচেছে গোডাউনে, অন্য দিকে খাদ্যের অভাবে মানুষ প্রাণ দিয়েছে রাস্তায়। করোনার মধ্যে সাহায্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি খাদ্য মজুদ করার প্রবণতা দুর্ভিক্ষকে আরো প্রকট করে তুলবে। বিশ্ববাসী নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি করে খাদ্যসঙ্কটকে সহনীয় করতে পারে। ধনী দেশগুলো যদি দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় থাকা দেশগুলোর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে ক্ষুধায় মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা কমবে। যদিও আমরা এমন উদার নীতি গ্রহণে এগিয়ে আসতে কোনো ধনী দেশকে দেখতে পাচ্ছি না। এ পর্যায়ে বৈশ্বিক সংস্থাগুলোকে সোচ্চার হতে হবে ক্ষুধাপীড়িত মানুষের জন্য।


আরো সংবাদ



premium cement