২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জলবায়ু পরিবর্র্তনের বিরূপ প্রভাব

উপকূলবাসীর কথা ভাবতে হবে

-

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে দিন দিন বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ঋতুবৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়। এর প্রভাবে দেশে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ প্রভৃতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ছাড়া কালবৈশাখীর ছোবল, ভারী-হালকা বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, খরা, বজ্রঝড়ের সংখ্যাও বাড়ছে। মৌসুমি বায়ু পরিবর্তনে এখন অতি ভারী বৃষ্টি, কখনো হালকা বৃষ্টিপাত বাড়ছে। পরিবর্তন এসেছে তাপপ্রবাহে। দেশে ভূমিধস, তীব্র ঘূর্ণিঝড় ও অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন গবেষকদের আশঙ্কাÑ ভবিষ্যতে প্রবল ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের নিয়মিত শিকার হবে বাংলাদেশ। জলোচ্ছ্বাস এখন বাংলাদেশে প্রতি দশকে একবার করে আঘাত হানছে। ২১০০ সালের মধ্যে প্রতি বছর তিন থেকে ১৫ বার নিয়মিত আঘাত হানতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় বাংলাদেশের প্রথাগত জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে উঠছে। পরিবেশের চরম অবস্থা এখানকার মানুষজনকে যে দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাতে যে কারো উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা।
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় সতর্কবার্তা দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সাগরের তাপমাত্রা, চাপ ও বায়ুপ্রবাহ স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করায় বিপদ আরো ঘনিয়ে আসছে। বঙ্গোপসাগরে ২ দশমিক ৭ সেন্টিগ্রেড গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। চলতি শতাব্দীর শেষে বাংলাদেশের উপকূল বরাবর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ দশমিক ৫ মিটার বাড়বে। বঙ্গোপসাগরের গভীরতা কমে যাওয়ায় এ দেশের উপকূলে সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও তাপমাত্রা বাড়ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় ক্ষতি আরো প্রকট হচ্ছে, যা আমাদের ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। শুধু উপকূলেই নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার দেশের সমতলভাগও বন্যাকবলিত হয়েছে। গত বছরের মতো এবারো দেশ বড় ধরনের বন্যাকবলিত হওয়ার আলামত স্পষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে চার কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ বন্যাঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ সংখ্যা আগের পূর্বাভাসের প্রায় ৯ গুণ বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, বঙ্গোপসাগর উপকূলে গত ৬০ বছরে প্রায় চার গুণ বেড়েছে সাইক্লোনের সংখ্যা। ১৯৭১ সাল থেকে এ বছরের আমফান পর্যন্ত গত ৫০ বছরে দেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে ছোট-বড় ৩৩টি ঘূর্ণিঝড়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার তথ্যমতে, ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে বঙ্গোপসাগর উপকূলে আঘাত হেনেছে ৭৮টি ঘূর্ণিঝড়। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ৮১ বছরে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল ৩০টি, সেখানে ১৯৬১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬০ বছরে হয়েছে ৪৮টি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে গত এক বছরে আঘাত হেনেছে তিনটি ঘূর্ণিঝড়। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় ভয়াবহতায় যোগ করছে নতুন মাত্রা। জলবায়ুর পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকলে দুর্যোগের সংখ্যা ও মাত্রা বেড়ে বারবার ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে আমাদের উপকূলভাগ আক্ষরিক অর্থে তলিয়ে যাবে না বটে। কিন্তু বিপদ হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস। যদি জলোচ্ছ্বাস ২০ ফুট উচ্চতার হয়, তবে আমরা তা ঠেকাতে পারব না। উপকূলীয় এলাকার বাঁধই হলো আমাদের রক্ষাকবচ। ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, সমানতালে জলোচ্ছ্বাসও যদি বাড়ে তবেই শঙ্কা। ওই শঙ্কা মোকাবেলা করতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। বাতাসে যদি কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ বর্তমান মাত্রায় স্থির থাকে, তাহলে পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হবে না। এই গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ দ্রুত ব্যাপক মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারলে হয়তো এমন দুঃখজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না। তাই আমাদের উচিত, বাতাসে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ব্যাপক মাত্রায় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নাটোরে স্কুলছাত্রকে ডেকে নিয়ে হত্যা, আটক ৪ মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই দুর্ঘটনায় তরুণ নিহত ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের

সকল