২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘মাস্ক’ দিয়ে অপরাধীদের মুখ ঢাকা

‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’

-

করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের এই মহাদুর্যোগে মাস্কসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর অপরিহার্যতা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতোমধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভস প্রভৃতি সুরক্ষাসামগ্রীর নকল-ভেজাল, বেআইনি মজুদ, অত্যধিক মূল্যে বিক্রি ইত্যাদি খবর। এবার প্রকাশ পেল, ভিন্ন রকম একটি উদ্বেগজনক সংবাদ।
তা হলো ‘মাস্ক’ পরিধান করে, অর্থাৎ মাস্ক দিয়ে মুখমণ্ডল আবৃত করে নানাবিধ অপরাধে কিছু লোক লিপ্ত। এই দুষ্কৃতকারীরা মহামারী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অপরাধ অব্যাহত রাখলেও পুলিশ তাদের শনাক্ত করতে পারছে না সিসিটিভির ফুটেজেও। তবুও ডিএমপি কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘মাস্ক পরে অপরাধ করার ঘটনা তেমন বেশি নয়।’ তবে বাস্তবতা হলো, বিশেষত রাজধানীতে মাস্কের এই অপব্যবহার বন্ধ হয়নি এবং এ কারণে জনমনে ভীতি বিরাজ করছে।
জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, মাস্ক পরা অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এর মধ্যে আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে মাস্কে মুখ ঢেকে অপরাধ সংঘটনের। জুন মাসে মাস্ক পরা তিন দুর্বৃত্ত ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে এক ঝুট ব্যবসায়ীকে তার বাড়ির সামনেই গুলি করে। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রূপনগর থানার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত সত্ত্বেও এ ঘটনায় অপরাধীর হদিস মেলেনি; কারণ ওদের মুখে মাস্ক লাগানো ছিল। এর আগে মে মাসে অপরাধীরা যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগে দোকানের শাটার ভেঙে তিন লাখ টাকার মেডিক্যাল পণ্য নিয়ে যায়। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি জানান, আমরা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। তবে সবাই ছিল মাস্ক পরিহিত এবং ওদের বহনকারী প্রাইভেট কারের নাম্বার প্লেটও ছিল না। এ অবস্থায় এক মাসেও এ ঘটনার সুরাহা করা যায়নি। তার মতে, গত তিন মাসে এ জাতীয় ঘটনা কম হলেও মাস্ক পরার কারণে অপরাধীদের সন্ধান পাওয়া খুব কঠিন। এ কারণে, ‘সোর্সদের আরো সক্রিয় করা এবং মাঠপর্যায়ে তদন্তের গতি বাড়ানো হয়েছে। ‘সোর্স’দের সূত্রে জানা যায়, ঢাকা শহরে গত দেড় মাসেই অন্তত ১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে মাস্ক পরা ডাকাতরা। এসব ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। ১৬ মে মোটরবাইকে এসে দু’ছিনতাইকারী বকশিবাজারে এক রিকশাযাত্রীর পৌনে দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পাঁচ দিন পরেই বেগমবাজারে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। চকবাজার থানা সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করলেও মাস্ক পরা এই দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পারেনি। তাই পুলিশের টহল বাড়াতে হয়েছে।
এ দিকে, পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, গত মার্চ মাসে দেশে ২৫টি ডাকাতি, ২৭৫ হত্যাকাণ্ড, ৪৯০ অপহরণ এবং ৫৫৮টি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশব্যাপী শুরু হয় করোনাভাইরাসের মহামারীজনিত লকডাউন বা সাধারণ ছুটি। পরের মাসেই অপরাধের সংখ্যা অনেক কমে যায়। দেখা গেছে, গত এপ্রিলে সারা দেশে মাত্র ১০টি ডাকাতি, ২৭৫টি হত্যা, ৩৩৫টি ধর্ষণ, ৪৬৫টি নারী নির্যাতন, সোয়া শ’ শিশু নির্যাতন, আটটি অপহরণ এবং ২৯০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে মে মাসেই অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বলেছেন, ‘প্রথমে মহামারীর ভয়ে অপরাধ কমে গেলেও পরে লোক চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরাধ বেড়ে গেছে।’ মহামারীর দরুন মানুষের আয় হ্রাস পাওয়া অপরাধ বৃদ্ধির আরেক কারণ বলে তার অভিমত।
আমাদের প্রত্যাশা, মাস্ক পরে অপরাধ করার প্রবণতাসহ সব ধরনের অপরাধ রোধ করার লক্ষ্যে প্রশাসন অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement