২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শিক্ষাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে

সবার স্বার্থ রক্ষা করে এগোতে হবে

-

করোনাকালে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত নড়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে আছে। সংসদ টিভির মাধ্যমে স্কুলের ছাত্রদের পড়াশোনার উদ্যোগ খুব একটা কার্যকর হয়নি। শিশুদের পড়াশোনার চেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী এ থেকে দুর্নীতি করে কিছু অবৈধ সুযোগ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেই মনে হয়েছে। বেশির ভাগ ছাত্রের বাসায় টেলিভিশন না থাকায় সবাই এ শিক্ষার আওতায় আসতে পারছে না। অন্য দিকে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। এখানেও সবার কাছে ইন্টারনেট পাওয়ার সমান সুযোগ না থাকায় অনেকে এ সুযোগ নিতে পারছে না। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সুবিধা স্বল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ করোনাকালে তাদের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশের শিক্ষাকার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে একেবারে স্থবির হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ টিকে থাকতে পারবে কি না এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে চতুর্মুখী সঙ্কটে। অভিভাবকদের কাছ থেকে তারা বেতনসহ বিভিন্ন ফি দাবি করতে পারছে না। অন্য দিকে স্কুলভাড়া, বিভিন্ন ইউটিলিটি ফি এবং শিক্ষকদের বেতন নিয়ে পড়ছে দোটানায়। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার কারণে অভিভাবকরা বেতন দিতে অনিচ্ছুক। এর মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা নিজেদের উপার্জন হারিয়েছেন। কিভাবে তারা সন্তানদের বেতন দেবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের ওপর এ জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। অন্য দিকে, কিছু অভিভাবক তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। তারা স্কুলের স্বার্থ বিবেচনা করতে অনিচ্ছুক। এই দোটানায় পড়ে অনেকে স্কুল বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিশাল ব্যয়ের চাপ থেকে বাঁচতে এমনটি করছেন। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিগত ১২ থেকে ১৫ বছরে যতসংখ্যক স্কুল বিক্রির মাধ্যমে হাতবদল হয়েছে, বিগত দুই মাসে তার চেয়ে বেশিসংখ্যক স্কুল বিক্রির মাধ্যমে হাতবদল হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে বেসরকারি খাতের হাজার হাজার স্কুলে।
এ দিকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পরিচালনা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। রাজধানীর কয়েকটি মানসম্পন্ন স্কুল করোনাকালে ছাত্রদের থেকে অর্ধেক বেতন নিচ্ছে। তবে শিক্ষকদের পুরো বেতন দিচ্ছে। এ ধরনের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল এবং ইতিবাচক মানসিকতার স্কুলের সংখ্যা খুব কম। কিছু স্কুল রয়েছে করোনা সেগুলোর জন্য একটা ইস্যু। এসব প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের কাছ থেকে পুরো আদায় করছে। আবার শিক্ষকদের বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে। এসব স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বইপত্র এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিজেরা সরবরাহ করে। ওই সব অভিভাবকদের উচ্চমূল্যে কিনতে হয়। এ ধরনের স্কুলের সংখ্যা প্রচুর। যেসব অভিভাবক এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিবাদের জন্য অভিভাবকদের একটি সংগঠন অচিরেই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে প্রকাশ হয়েছে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্যপূর্ণ ও বিশৃঙ্খল। শিক্ষার ধারা এত বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষম ধারায় বিভক্ত পৃথিবীর আর কোনো শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। করোনাকাল এ শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বল ভিত্তির ওপর যেন একটা বড় আঘাত হানল। অবরুদ্ধ অবস্থা আরো দীর্ঘায়িত হলে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে ধসে পড়বে। টেলিভিশনের মাধ্যমে শিশুদের পাঠদান ত্রিশ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে না। এভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালালে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে। সরকারের উচিত সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। অন্য দিকে বেসরকারি শিক্ষায় যে বিশৃঙ্খলা প্রকাশ হয়েছে তার লাগাম টেনে ধরতে হবে। সিলেবাস সম্পন্ন করার বিষয়ে উন্নত পরিকল্পনা দরকার। একই সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকসহ সবার দিকে নজর দিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement