২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কোরবানির পশু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা

অর্থনীতির স্বার্থে বিবেচনা করতে হবে

-

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সারা দেশে পশু পালন বহু গুণে বেড়েছে। মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় এই সময় বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক পশুর চাহিদা সৃষ্টি হয়। দেশে পর্যাপ্ত পশু পালন না হওয়ায় এই মৌসুমে ঘাটতি দেখা দিত। আগে ভারত থেকে গরু আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হতো। হঠাৎ করে ভারত গরু রফতানি বন্ধ করে দিলে কোরবানির সময় পশু সঙ্কট সৃষ্টি হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের এই আচরণ আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে দেশে পশু পালন বেড়ে যায়। দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পশু সারা বছরের চাহিদা পূরণ করছে। আবার কোরবানির জন্যও আলাদা করে খামারি এবং ব্যক্তিপর্যায়ে বিপুল গবাদিপশু পালা হচ্ছে। ফলে পশু সম্পদে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে এ বছর সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে কোরবানি আসন্ন। বিপর্যয়কর পরিস্থিতির কারণে পশুর গোশত বেচাবিক্রি বাজারে কম। এর ওপর আগে থেকে রয়ে গেছে অনেক পশু। কম চাহিদার বিপরীতে বিপুলসংখ্যক পশুর জোগান থাকায় এ বছর খামারিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পশু সম্পদ রক্ষায় সরকারের টেকসই নীতি থাকা দরকার।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানির জন্য খামারগুলোতে এক কোটি ১৯ লাখের বেশি পশু মজুদ রয়েছে। গত বছর কোরবানির পশু মজুদ ছিল এক কোটি ১৮ লাখ, এর মধ্যে জবাই হয়েছিল এক কোটি ছয় লাখ। গত বছরের প্রস্তুতকৃত ১২ লাখ পশু উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে। এ দিকে গত তিন মাসে নিয়মিত পশু জবাই অনেক কমে গেছে। দুর্যোগের মধ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাই অর্ধেকের বেশি পশু জবাই হয়নি। হিসাবে প্রায় ১০ লাখ পশু অবিক্রীত রয়েছে। অন্য দিকে দুর্যোগের কারণে এ বছর কোরবানি পশু বিক্রির সংখ্যা অনেক কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেটা আসলে কতটা কম তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। প্রতি বছর কোরবানির সময় ধনীদের মধ্যে কোরবানি পশু কেনার একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। অন্য দিকে যারা নিম্নমধ্যবিত্ত তারাও শরিক হয়ে কোরবানির দিত। এবার ধনীদের প্রদর্শনের যে কোরবানি সেটি নিঃসন্দেহে কমবে। অন্য দিকে নিম্নবিত্তের আর্থিক সঙ্কটের কারণে তারাও কোরবানির পশু কিনতে পারবেন না। কোরবানিতে পশু জবাই তাই ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মজুদ করা পশু যখন বিক্রি করতে পারছেন না খামারিরা; তখন এই পশু পালনের খরচও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন পশু খাদ্যের দাম এই দুর্যোগে বেড়ে গেছে। সময়মতো বিক্রি করে লাভ তোলার বদলে পশু খামারে রেখে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে খামারিদের। কোরবানির পশু হাটে নিয়ে যাওয়ার খরচও এখন বেশি। এর ওপর কোরবানি উপলক্ষে ভারত থেকে বানের মতো পশু ঢোকে; তা হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। বৈধভাবে ভারত থেকে পশু আমদানি নেই; কিন্তু অবৈধভাবে তা চলছে। কোরবানি উপলক্ষে সেটা যেন বেড়ে না যায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। অন্য দিকে পশুর হাট বসানো নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকে গরুর হাট বসানোর বিরুদ্ধে মত দিচ্ছে। অনেকে বলছে, অনলাইন হাট থেকে পশু কেনাবেচা করতে। অনলাইন বিকল্প বাজার এখনো আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। প্রকৃতপক্ষে সারা দেশে হাটবাজার চালু রয়েছে। কোরবানির পশুর হাট করোনা সংক্রমণ বাড়িয়ে দেবে এই যুক্তিতে হাট বসানো বন্ধ করা কতটুকু সঠিক হবে।
কোরবানির ঈদ বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা অংশ। এর সাথে গরিব মিসকিন থেকে সমাজের উপরতলার মানুষের অর্থনীতির একটি সম্পর্ক রয়েছে। এ দেশের চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প কোরবানির পশুর চামড়ার ওপর বিপুলভাবে নির্ভর করে। তাই এই দুর্যোগের মধ্যে খামারি ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সবার দিকে লক্ষ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশে উৎপাদিত বিপুল পশু থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে হলে সেগুলো বিক্রির পরিবেশ সহজ করতে হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের পশুর বাজারের উন্নত ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। কোরবানির পশু যাতে সহজে হাটে এনে বিক্রি করা যায় সে ব্যাপারে জোর প্রস্তুতি থাকতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement