২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে

স্বাস্থ্যবিধিতে শৈথিল্য আত্মঘাতী

-

করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেশে বা বিদেশে এখনো কমেনি কিংবা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং ঘটেছে উল্টো। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। সংক্রমণ বাড়ছে আরো দ্রুত। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মারা যাচ্ছেন ৩০-৪০ জন। তার পরও মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ব্যাপারে যেন অনেকটাই শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন চললেও রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র মানুষকে তেমন কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াই অবাধে বাইরে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। একমাত্র যে সুরক্ষাব্যবস্থা লোকেরা ব্যবহার করছে, সেটি হলো মাস্ক। কিন্তু সেটিও নামমাত্র। মাস্ক পরার নিয়ম হলো, যতক্ষণ বাইরে থাকবেন ততক্ষণ এক সেকেন্ডের জন্যও সেটি মুখ থেকে খুলবেন না। মাস্কের সামনের দিকটা হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না। কারণ ভাইরাস মাস্কের সামনের অংশেই লেগে থাকবে। সেটি স্পর্শ করলে নিজের হাতের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে যাবেন। নিয়ম হলো, ঘরে এসে মাস্ক খুলে সেটি ফেলে দেবেন অথবা ধুয়ে ফেলবেন। কিন্তু এই নিয়ম মেনে চলা তো দূরের কথা, অনেকেই মাস্ক কেবল গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার নিয়ম মোটেই অনুসরণ করছেন না। বাজারে, শপিংমলে, যানবাহনে গাদাগাদি করে মানুষ চলাচল করছে।
এই বৈশ্বিক মহামারীতে এরই মধ্যে বিশ্বে এক কোটি আট লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মাত্র ছয় মাসে মারা গেছেন পাঁচ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ।
এসব তথ্য জানার পরও আমাদের বর্তমান শৈথিল্য নিঃসন্দেহে আত্মঘাতী। বিশ্বের অন্য অনেক দেশেও পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। অনেক দেশে পরিস্থিতি হয়েছে জটিল। প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে গত শনিবার গুরুতর করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শিকার দেশগুলোকে দ্বন্দ্বের পরিবর্তে বাস্তবতার নিরিখে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানিয়েছে। ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক বলেন, ‘কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, এটা শেষ হওয়ার ধারেকাছেও নেই। কিছু দেশ যদিও কিছুটা উন্নতি করেছে, তবু বিশ্বজুড়ে মহামারীটি দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে।’
জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস এমনভাবে নিজের রূপান্তর ঘটাচ্ছে, যাতে এটি আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারছে, আরো সহজে অধিকসংখ্যক মানুষকে আক্রমণ করতে পারছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে নতুনরূপে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে মানবদেহে সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু সাধারণভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে শৈথিল্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করলেও তার সুফল পেতে আরো আড়াই বছরের মতো সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আপাতত করোনা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির কোনো উপায় নেই। ভ্যাকসিন দেয়ার পর কেউ করোনা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ হচ্ছেন কি না, তা বুঝতে সময় লাগবে। ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার পরও আমাদের দেশে সাধারণ রোগীর পর্যায়ে তা আসতে কত রকমের ঝকমারির ভেতর দিয়ে যেতে হবে কে জানে। বিশ্বের ধনী ও গরিব সব দেশই যাতে সমভাবে ভ্যাকসিন পেতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতেও অনেক বাধা আসতে পারে।
সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি অনুসরণে শৈথিল্য দেখানোর মাধ্যমে কেউ যেন মৃত্যুর ঝুঁকি না নিই। পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

 


আরো সংবাদ



premium cement