২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
নকল স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর ‘ব্যবসা’

কার্যকর অভিযান চালাতে হবে

-

করোনা পরিস্থিতির এই চরম দুঃসময়েও একশ্রেণীর অর্থগৃধনু মানুষের লোভ ও অসততার বিরাম নেই। স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর নকল তৈরি ও বিক্রির ব্যবসায় বেপরোয়াভাবে অব্যাহত রাখাই এর প্রমাণ। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ, তথা কোভিড-১৯ মহামারীর ভয়াল তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক ও অ্যাপ্রোনসহ বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর চাহিদা এখন অত্যধিক। তবে সে অনুপাতে মানসম্মত সুরক্ষাসামগ্রী বা উপকরণের সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি থাকায় শুধু যে দাম অনেক বেশি, তা নয়; নকল ও মানহীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের অবাধ উৎপাদন ও বিপণন একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৃশ্যত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মাঝেই রাজধানীসহ গোটা দেশে এসব সামগ্রী তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে, আইন ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু মুনাফাখোর ব্যক্তি ‘ব্যবসা’র নামে সাধারণ মানুষের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লুটে নিচ্ছে।
পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশ, কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে দমনাভিযান পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট পণ্য জব্দ করাসহ অপরাধীদের আটক, মামলা, বিচার ও শাস্তির পরও এসব অসৎ লোকের দৌরাত্ম্য কমেনি। এ ধরনের নকলবাজ ও লোভী লোকদের অপকর্মের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ উপায়ান্তর না পেয়ে এসব সামগ্রী কিনছেন এবং অনিবার্যভাবেই হচ্ছেন প্রতারিত। চিকিৎসকদের অভিমত, নকল ও মানহীন সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করায় মানুষের করোনা ঝুঁকি এবং স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে মারাত্মকভাবে।
পত্রিকার তথ্য মতে, খোদ ঢাকা মহানগরীতে মতিঝিল, পল্টন, শান্তিনগর, খিলগাঁও, বাসাবো, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, ওয়ারী, ধানমন্ডি, মীরপুর, লালবাগ, চকবাজার, বংশাল, কলাবাগান, কাওরানবাজারসহ প্রায় সর্বত্র স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বলে বাজে, নকল ও অনির্ভরযোগ্য পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। গুলশান-বনানী-উত্তরা-বারিধারার মতো ‘অভিজাত’ এলাকাতেও এটি পরিলক্ষিত হয়। এমনকি, লঞ্চ টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনের মতো প্রকাশ্য জায়গায় হাঁকডাক ছেড়ে মানুষকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে স্যানিটাইজারসমেত নকল সুরক্ষা উপকরণের প্রতি। দেখা গেছে, কোনো কোনো থানার সামনে, অর্থাৎ পুলিশের নাকের ডগায়, নকল স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে। আগে যারা ফুটপাথে বিভিন্ন পণ্য ফেরি করতেন, সেসব বিক্রেতা এখন বিক্রি করছেন নকল স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী। জানা যায়, এ ব্যবসা পুরোদমে চলছে দেশের সব বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরে; সেই সাথে উপজেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতে। মাঝে মধ্যে পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালালেও তা প্রধানত ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৫ জুন র্যাব খোঁজ পায় যে, যাত্রাবাড়ীর একটি আবাসিক ভবনের ভূগর্ভস্থ অংশে নকল স্যানিটাইজার তৈরি করা হয়। এর পরই অভিযানকালে মোবাইল কোর্ট দেখেছেন, বেআইনিভাবে বিপুল পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী সেখানে মজুদ রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রঙ, লেবু আর স্পিরিট জেল দিয়ে কথিত স্যানিটাইজার বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। তদুপরি, শাহবাগ ও আরো কয়েকটি স্থানের ফার্মেসিতে নকল জীবাণুনাশক বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।
ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, নকল ও ক্ষতিকর ‘সুরক্ষাসামগ্রী’সহ যেকোনো মানহীন ও অবৈধ পণ্য বিক্রি বন্ধের জন্য নিয়মিত কার্যকর নজরদারি ও অভিযান এবং কঠোর শাস্তির বিকল্প নেই। তাছাড়া, মানসম্মত ও স্বাস্থ্য অনুকূল সামগ্রীর সহজপ্রাপ্যতা অবিলম্বে নিশ্চিত করা জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement