২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা

দোষীদের কোনো ছাড় নয়

-

সারা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস কোভিড-১৯-এর রোগী আমাদের দেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। আর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বপ্রথম মারা যায় ১৮ মার্চ। দেশে গত সোমবার ২৯ জুন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার ৮০১ জন। এই ভাইরাস শনাক্তে প্রথমে আইইডিসিআর এককভাবে দায়িত্বে থাকলেও সংক্রমণ বাড়তে থাকলে এখন পর্যন্ত ৬৮টি নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কোভিড-১৯ পরীক্ষার সুবিধার্থে বেসরকারি পর্যায়েও নমুনা সংগ্রহের অনুমতিও দেয় সরকার। আইইডিসিআরের অনুমোদন নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামে একটি সংস্থা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে করোনার নমুনা সংগ্রহে ৪৪টি বুথ খোলে। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করত সংস্থাটি। এই নমুনা সংগ্রহে শর্ত ছিল, সরকার নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে।
গুলশানের কনফিডেন্স টাওয়ারের ১১, ১৪ ও ১৫ তলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের অফিস। সংস্থাটির কর্ণধাররা বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দু’টি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এ কাজে তাদের নিজস্ব কর্মিবাহিনী ছাড়াও সিন্ডিকেটে যোগ দেয় দালাল চক্র। ফোন করলেই বাসায় গিয়ে চক্রের সদস্যরা সংগ্রহ করে আনতেন করোনার নমুনা। বিনিময়ে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নিতেন তারা। কিন্তু নমুনার কোনো পরীক্ষা ছাড়াই এক দিন পরই মনগড়া ফল দিয়ে দেয়া হতো। এভাবে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে হয় আরটি পিসিআর ল্যাবে। প্রতিষ্ঠানটি এ শর্তের তোয়াক্কা না করে কম্পিউটারে তৈরি করা মনগড়া রিপোর্ট রোগীর কাছে পাঠাত। এভাবে করোনা টেস্ট করার নামে মানুষের জীবন নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছিল বেসরকারি নমুনা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ার।
জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রাধান নির্বাহী কর্মকতাসহ ছয়জনকে গত ২৩ জুন তেজগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রধান জানিয়েছেন, রাজধানীতে এ রকম কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে; যারা পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে করোনা নমুনা সংগ্রহ করছে। একই সাথে ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছে।
এত দিন আমরা শুনে এসেছি বিপদে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায় বলে অন্য প্রাণিকুলের চেয়ে আলাদা বিশিষ্টতার অধিকারী। গর্বভরে এ-ও বলতাম যে, আমরা বাংলাদেশের মানুষ আর দশটি দেশের নাগরিকদের চেয়ে বেশি মানবিক। আমাদের সমাজ মানবিকতায় পরিপূর্ণ। কিন্তু মোবাইল ফোনসেট সবার হাতে হাতে যাওয়ার পর আমরা দেখলাম, এই দেশের মানুষ কী পরিমাণ অসত্য কথা বলেন। গণপরিবহনেও কী অবলীলায় অপর প্রান্তের মোবাইলসেটধারীকে নিজের অবস্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এ নিয়ে কারো মধ্যে অপরাধবোধের লেশমাত্র দেখা যায় না। ঠিক তেমনিভাবে এই করোনাকালে সমাজের অমানবিক দিকটি নগ্নভাবে সবার সামনে ধরা দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সমাজের একশ্রেণীর ইতর মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ করোনা শনাক্তের নামে অর্থ কামাতে উঠেপড়ে লেগেছে। ফলে ভুয়া করোনা শনাক্তের মাধ্যমে টাকা কামানোর ঘটনাও ঘটছে। যদিও নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি নেয়া হয়।
আমরা মনে করি, এসব মানুষ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই সাথে যারা সংস্থাটিকে করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছেন, তাদের মধ্যেও কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। একই সাথে সব দোষীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূল শাস্তি দিতে হবে। কারণ, যারা মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অর্থ কামাতে কসুর করে না, তারা আর যাই হোক মনুষ্য পদবাচ্য উপাধি পেতে পারে না। সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন দেয়া হয়; যাতে করে অন্যরা এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করার সাহজ না পায়।


আরো সংবাদ



premium cement
গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে ৩টি সংগঠনের নেতৃত্বে মানববন্ধন থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ছেলে হারা মা সাথিয়ার কান্না যেন থামছেই না বৃষ্টির জন্য নারায়ণগঞ্জে ইস্তিস্কার নামাজ আদায় প্রবাসী স্ত্রী থেকে প্রতারণার মাধ্যেমে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়, ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা চান হাইকোর্ট আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরো ৪৬ বিজিপি সদস্য উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা কক্সবাজারে ট্রেন লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ গাজার অর্ধেক জনসংখ্যা ‘অনাহারে’ : জাতিসঙ্ঘ বেড়াতে নিয়ে প্রেমিকাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

সকল