২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
পরিবেশ এখন আলোচনায়

অনাচার বন্ধে দরকার দৃঢ় অঙ্গীকার

-

বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের কথাটি আলোচনায় রয়েছে। মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে প্রাকৃতিক পরিবেশের চরম ক্ষতি হওয়ায় মানুষের সমাজে ভয়াবহ সব বিপর্যয় নেমে আসছে। এমনকি অনেকে বলছেন, প্রকৃতির সাথে মানুষ যথাযথ আচরণ না করায় প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসাবেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তারা বলছেন, পশুপাখি ও প্রকৃতিকে তাদের মতো থাকতে দিয়ে মানুষ যদি সমাদর করত তাহলে এ ধরনের মহামারী হয়তো আসতো না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটাও প্রত্যক্ষ করা গেছে যে, মানুষ যখন বাধ্য হয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে, প্রকৃতি আপনা থেকে নিজের আসল অবস্থানে ফিরে যেতে শুরু করেছে। উষ্ণতা বাড়ার হার কমে বরফগলা বন্ধ হতে শুরু করেছে। পানিদূষণ বায়ুদূষণ দ্রুতগতিতে কমতে শুরু করেছে। এ বছর এমন একটা সময় বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হলো, যখন পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, কিন্তু মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে নেই। তবে এই ভিন্নতর সময়ে মানুষের নতুন ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের ঠিক করে নিতে হবে, প্রকৃতির বরপুত্র মানুষ কোভিড-১৯ থেকে কী শিক্ষা নেবে, আর কিভাবে তারা প্রকৃতির সাথে বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে মিলেমিশে বসবাস করবে।
ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর অন্যতম। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ দুটোতেই ঢাকা তালিকার শীর্ষে। তবে করোনার এই সময়ে এ শহরের পরিবেশের মান উন্নত হতে দেখা গেছে। বায়ুমানের দিক থেকে এটি বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরগুলোর তালিকা থেকে বের হয়ে যায় এই সময়ে। একইভাবে শহরের শব্দদূষণও কমে মানুষের সহ্যের সীমায় আসে। কিন্তু লকডাউন উঠিয়ে নেয়ার পরপরই দেখা যাচ্ছে শহরটি পরিবেশ দূষণে আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে। জলাশয়গুলো পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার মতো একটি শহরের পরিবেশ বসবাসের উপযোগী রাখার জন্য জলাশয় ও পর্যাপ্ত গাছপালা থাকা দরকার। এক সময় ঢাকায় পর্যাপ্ত জলাশয় ছিল, ছিল প্রচুর গাছপালাও। আমরা সেগুলো সমূলে নষ্ট করে নিজেদের জীবন করেছি ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার দেশগুলোর অন্যতম। সীমিত বনভূমিও আমরা রক্ষা করতে পারিনি। বনভূমি উজাড় করে সেখানে কলকারখানা জনবসতি গড়ে তুলেছি। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের পরিবর্তে তাদের নির্বিচারে নিধন করছি, পাচার করছি। উপকূলীয় বনভূমি ও প্রকৃতির ওপর যথেচ্ছ অনাচার করেছি। বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনের ওপরও যারপরনাই অত্যাচার করেছি। নদী ভরাট করে বাঁধ দিয়ে কৃষি ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে বেশির ভাগ নদী আমরা প্রায় মেরে ফেলেছি। বন্যপ্রাণী ও নদীখেকো সবাই এ দেশে শক্তিশালী।
জাতি হিসেবে প্রকৃতি উদার হস্তে আমাদের যা দিয়েছিল এগুলো আমরা সযতেœ রক্ষা করতে পারিনি। করোনার এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে আমাদের তাই নতুন উপলব্ধির প্রয়োজন রয়েছে। আমরা কি আগের মতোই পরিবেশের প্রতি অনৈতিক নিষ্ঠুর আচরণ করব, নাকি বন্ধুসুলভ আচরণের নীতি গ্রহণ করব! দেশের প্রত্যেকটি হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত ও বনভূমিসহ যত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে সেগুলো রক্ষায় পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এই কাজে সরকারকে নেতৃত্ব দিতে হবে। সাথে যুক্ত করতে হবে সংশ্লিষ্ট সব বেসরকারি সংস্থাকে। এতে জনগণের সর্বোত্তম সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে। তাই জনসচেতনতা তৈরি করতে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষকে সংগঠিত করতে হবে। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে; পরিবেশ সুরক্ষায় সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা কার্যকরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। আশা করি সরকার এ কাজে যথাযথ উদ্যোগ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement