২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঝড়ে চুয়াডাঙ্গায় আমের ক্ষতি ৩২ কোটি টাকা

অবিলম্বে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিন

-

বাংলাদেশে উন্নত জাতের আম রাজশাহী অঞ্চলের নবাবগঞ্জে তো বটেই, দেশের পশ্চিম সীমান্তের কোনো কোনো জেলাতেও এর ব্যাপক উৎপাদন হয়ে আসছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এবার ঈদের প্রাক্কালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ ভয়াবহ তণ্ডব চালিয়েছে চুয়াডাঙ্গাসহ কয়েক জেলায়। ফলে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন, বিনষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির ফসল; সেই সাথে কোটি কোটি টাকা মূল্যের উন্নত জাতের আম এবং গুরুত্বপূর্ণ বহু স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তী ১০-১২ দিনেও ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসাব করা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়েছে, আমফানের ঘূর্ণিবাতাসের শিকার হয়ে কেবল চুয়াডাঙ্গা জেলায়ই আমচাষিদের ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৩২ কোটি টাকা। জানা যায়, আম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার জীবননগর উপজেলাতে।
নিজস্ব সংবাদদাতাদের বরাতে নয়া দিগন্তর সচিত্র প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনেক আমবাগানে ঝড়ে গাছের নিচে পড়া আমে পুরো এলাকা ছেয়ে গেছে। যথাসময়ে এত আম বিক্রি করা নিয়ে উৎপাদকরা উদ্বিগ্ন। শুধু ‘আমফান’ নয়, এবার পরপর দু’টি ঝড়ে সেখানে আমবাগানের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের কৃষি দফতর জানায়, বিগত মৌসুমে জেলায় আমের বাগান ছিল এক হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এবার তা আরো বেড়েছে। এ বাগানগুলোর মোট ফলন হওয়ার কথা ২৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। পাইকারি বাজারে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে এই আমের দাম হওয়ার কথা ৮৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড়ে ১০ হাজার ৫৮৪ টন আমের ক্ষতি হয়েছে, যার দাম ৩১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, প্রায় ৩৫ শতাংশ আমই ঝড়ে পড়ে গেছে। এবার আম বিক্রির মাধ্যমে বছরজুড়ে বাগানের পরিচর্যা এবং শ্রমিকের মজুরি খরচ নির্বাহ করা সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্ট চাষিদের অভিযোগ। আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, চুয়াডাঙ্গায় আমের ভালো ফলন সত্ত্বেও করোনা পরিস্থিতিতে তা বাজারজাত করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। চুয়াডাঙ্গায় হিমসাগর, লেংড়া, বোম্বাই, আম্রপালি প্রভৃতি ভালো জাতের আমের চাষ চলছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার আম রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়ে থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিশেষ সহায়তা দরকার এ ক্ষেত্রে। তবে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের ‘সজাগ দৃষ্টি’ রয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার বিশেষ করে জীবননগরে ঝড়ে বসতবাটি, ক্ষেতের শস্য, বৃক্ষ সম্পদ ও জলাশয়ের পাশাপাশি আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রধানত ফসলের ক্ষেত বাঁধভাঙা পানিতে ডুবে যাওয়া এবং বাগানের বহু আম ঝরে পড়া এই উপজেলার কৃষকদের ‘মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া’র মতো ক্ষতি করেছে। সরেজমিন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শত শত বিঘা বাগানে ঝরে পড়া আম স্তূপ হয়ে আছে। অনেক আমগাছ ঝড়ে উপড়ে গেছে। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টাব্যাপী ‘আমফান’ ঝড়ের তাণ্ডব নজিরবিহীন। দৃষ্টান্তস্বরূপ গয়েশপুরের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এ গ্রামে ৬০ বিঘা জমিতে আমবাগান করেছেনÑ এমন এক চাষি বললেন, প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছিল আম। কিন্তু ঝড়ে ৮০ শতাংশ আমই ঝরে পড়েছে। এ ক্ষতি অভূতপূর্ব। এই ৬০ বিঘার আম ৪০ লাখ টাকায় বিক্রির টার্গেট থাকলেও ঘূর্ণিঝড় বহু আমচাষিকে পথে বসিয়েছে। জীবননগরের ইউএনও জানান, ‘এখানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে। তবে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।’
এমনিতেই করোনার তাণ্ডবে চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের সব জেলার মানুষ বিপন্ন ও সন্ত্রস্ত। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও প্রবল বর্ষণের ঘটনা কয়েক জেলার জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর সাথে তুলনীয়। ঝড় ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এবং তাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া জরুরি। বিশেষত আমসহ অর্থকরী ফল-ফসল যারা উৎপাদন করছেন, পণ্য বিপণন এবং আর্থিক প্রণোদনাসহ তাদের সামগ্রিক সহায়তা দেয়ার দিকে কর্তৃপক্ষের সবিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement