২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
যুক্তরাষ্ট্রে নির্মম কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা

বর্ণবাদী বিভাজন আরো উসকে দেবে

-

আমেরিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মানুষ ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। একজন কৃষ্ণাঙ্গকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা। কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বর্ণবাদী বৈষম্য আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় অনেকে দীর্ঘ দিন ধরে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক বিভেদের আশঙ্কা করে আসছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দিকে নজর না দিয়ে এ বিভেদ আরো বেশি উসকে দিচ্ছেন। মূলত তিনি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। এ ধরনের বিভেদ জারি রেখে তিনি আবারো নির্বাচনী ফায়দা নিতে চান। এবারের বিক্ষোভ শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তার পরও ট্রাম্প বিক্ষোভ মোকাবেলায় দমনমূলক কৌশল অবলম্বন করছেন। এতে করে মানবতা ও সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থানের জন্য সুনাম কুড়ানো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ পতনের নমুনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
২৫ মে মিনেসোটার মিনিয়াপোলিসে একটি দোকানে কেনাকাটা শেষে মূল্য পরিশোধ করেন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। দোকানের মালিক পুলিশকে ফোন করে অভিযোগ করেন, ফ্লয়েডের দেয়া ২০ ডলারের নোটটি জাল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে গাড়িতে উঠানোর সময় তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এর পরের ঘটনার ভিডিও রেকর্ড রয়েছে। সেটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা তার ঘাড়ের ওপর চেপে বসেন। এ সময় ফ্লয়েড জানান যে, তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। পুলিশ কর্মকর্তা দীর্ঘ ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে তার গলা হাঁটু দিয়ে চেপে রাখেন। এতেই ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়।
পুলিশের এই বর্বর আচরণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এই শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা যে সংস্কারাচ্ছন্ন মনে এ নির্দয় আচরণ করেছেন, সেটিও এই ভিডিও থেকে মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। ঘটনার প্রমাণ ছাড়াই এই কৃষ্ণাঙ্গের ওপর অপরাধীর মতো আচরণ করেছে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। অর্থাৎ কৃষ্ণাঙ্গ মানেই অপরাধী।
সপ্তাহজুড়ে চলা বিক্ষোভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ আচরণকে কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘুদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বলেই মানুষ ধরে নিয়েছে। এ ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে চলেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় এটি আরো বেড়ে গেছে। ট্রাম্পের আচরণও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে। বর্তমানে চলা বিক্ষোভ প্রশমনে তিনি কোনো ধরনের নমনীয় অবস্থান গ্রহণ না করে আক্রমণাত্মক কৌশলই নিয়ে চলেছেন। বিক্ষোভ দমনে রিজার্ভ ফোর্সকে নামানো হয়েছে। অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ ধরনের হামলায় একজন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের কেউ কেউ এখন পরামর্শ দিচ্ছেন কঠোর কায়দায় বিক্ষোভ দমন করার জন্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রও বিভিন্ন দেশের মানুষের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছে। বিগত কয়েক দশকে বিশ্বে এমনটাই দেখা গেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের পাশাপাশি সেটি অনেকের মানবাধিকার রক্ষায় কাজে এসেছে। এখন এসব মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাতে দেখা যাচ্ছে তারা যেন মানুষের ক্ষোভ প্রকাশের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তর থেকে শক্তিহীন হয়ে পড়ছে। ট্রাম্পের শাসনামলে এই পতন দ্রুত গতিতে হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তিকে উসকে দেয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার কৌশল এ পরিণতি ত্বরান্বিত করছে। এর ফলে ট্রাম্প ও তার অতি দক্ষিণপন্থী সমর্থকরা কতটুকু লাভবান হচ্ছে সেটি এ বছরের নির্বাচনে বোঝা যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবক্ষয়ের ধারা নতুন করে শুরু হলো তা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রটির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। ইতোমধ্যে আমেরিকা সারা বিশ্বে তাদের আগের প্রভাব হারিয়েছে। দেশের ভেতরের বিবাদ তাদের দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু করে দিচ্ছে। কৃষ্ণাঙ্গ, সংখ্যালঘু ও অভিবাসীদের প্রতি আচরণ পরিবর্তন না করলে তাদের পতন আরো ত্বরান্বিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement