২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সঙ্কটে বিদেশফেরতরা

৮৭ শতাংশের কোনো আয় নেই

-

আমাদের জাতীয় আয়ের দ্বিতীয় প্রধান উৎস প্রবাসী আয়। বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে কয়েক দশক ধরে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু করোনাকালে তাদের অনেকেই দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এক জরিপের তথ্যানুযায়ী, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে দেশে ফিরে আসা অভিবাসী কর্মীদের ৮৭ শতাংশেরই এখন আয়ের কোনো উৎস নেই। ফেরত আসা অভিবাসীদের শতকরা ৮৪ ভাগ এখনো জীবিকা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতে পারেননি। ৬ শতাংশ ফের বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবছেন। বাকিরা কৃষিভিত্তিক ছোট ব্যবসা, মুদি দোকান বা অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করছেন। বিদেশফেরত এসব মানুষের ৯১ শতাংশ এখনো সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য-সহায়তা পাননি। তাদের বর্তমান অবস্থা, সঙ্কটের স্বরূপ এবং করোনাজনিত পরিস্থিতি তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর কী প্রভাব ফেলেছে, তা জানতে ফেরত আসা ৫৫৮ জন প্রবাসীকর্মীর সাথে কথা বলে বেসরকারি একটি সংস্থা এই জরিপ চালায়। করোনার ঠিক আগে এবং করোনার মধ্যে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশী প্রবাসীকর্মী ফিরে এসেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আরো প্রায় চার-পাঁচ লাখ প্রবাসীকর্মীকে ফেরত আসতে হতে পারেন। সরকার ও প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন বিভিন্ন এনজিও এই পূর্বাভাস দিয়েছে।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, প্রবাসীকর্মীদের ৪০ শতাংশ করোনা সংক্রমণের কারণে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ৩৫ শতাংশ ছুটিতে এসেছিলেন। আর ১৮ শতাংশ পারিবারিক কারণে ফিরেছেন। এ ছাড়া ৭ শতাংশ এসেছেন অন্যান্য কারণে। জরিপে অংশ নেয়া ৭৪ শতাংশ এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। ফিরে আসা ৩৪ শতাংশের নিজের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই। ১৯ শতাংশের যে সঞ্চয় আছে, তা দিয়ে আরো এক-দুই মাস চলতে পারবেন। সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা এর চেয়ে বেশি সময় চলতে পারবেন এমন আছেন ৩৩ শতাংশ। ১০ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন।
করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি ইতোমধ্যে তছনছ হয়ে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি মহামন্দার কবলে। এর অবস্থা আগামীতে কী দাঁড়ায় বলা মুশকিল। তবে করোনা-উত্তর ভোগবাদী বিশ্বব্যবস্থার জন্য সেই পরিস্থিতি যে সুখকর হবে না, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সেই ঢেউ আমাদের জীবনেও আঘাত হানতে শুরু করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা এ থেকে রেহাই পাবেন না। তাই সামনের দিনগুলোতে অনেক বাংলাদেশী বিদেশে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে পারেন। যদিও সরকার প্রবাসীকর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটি শুধু সরকারের একার নয়। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে। কারণ এই প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি সবসময় সচল রেখেছেন। এমনকি করোনার সময়ও তারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাচ্ছেন। শুধু মে মাসের ১৯ দিনে ১০৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারি থেকে ধরলে পাঠিয়েছেন ৫৫ হাজার কোটি টাকা। কাজেই এই সঙ্কটময় সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যারা এখনো বিদেশে আছেন এবং যারা ফিরে আসছেন সবার পাশেই দাঁড়ানো জরুরি।
ফিরে আসা প্রবাসী যারা বিদেশে না গিয়ে দেশেই কাজ করতে আগ্রহী তাদের যোগ্যতানুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচি হাতে নিতে হবে; যাতে দেশেই সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। তাদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি নিরূপণ করে মনোসামাজিক সহায়তাসহ টেকসই পুনরেকত্রীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ, দক্ষতা বাড়ানো ও আয়বর্ধক কাজে যুক্ত করতে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেয়া দরকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা যাতে বিদেশে তাদের ছেড়ে আসা চাকরিতে ফিরতে পারেন, সে জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে সরকারকে তৎপর হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত দেশের কূটনীতিকদের ভূমিকাই মুখ্য। কিন্তু আমাদের কূটনীতিকদের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দূতাবাসকর্মীদের নিয়ে প্রবাসীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এ জন্য বিদেশে অবস্থানরত দেশের নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে কূটনীতিকদের যথাযথ কর্তব্যপরায়ণ করতে সরকারকে এখনই সচেষ্ট হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইউপি চেয়ারম্যানরা পদে থেকেই উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন খুলনায় ইসতিসকার নামাজ আদায় ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে সংঘর্ষে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত শিশুদের বিকাশে অটিজম অভিভাবকদের সচেতনতা ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন : দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি নেতাদের মুক্তির দাবিতে রিজভীর নেতৃত্বে নয়াপল্টনে বিএনপির মিছিল বৃষ্টির জন্য দেশবাসীর প্রতি ইস্তিস্কার নামাজ আদায়ের আহ্বান আমিরে জামায়াতের সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চুক্তি স্বাক্ষর করল তুর্কি, ইরাক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ঢাকায় ‘হিট স্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’

সকল