২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আমফানের আঘাত

দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন

-

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আমফান এমন একসময় আঘাত হেনেছে, যখন করোনার সংক্রমণ মোকাবেলায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। নিকট অতীতে আইলা সিডরের মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশ বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যেকটি দুর্যোগ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় ছিল। দুর্ভাগ্য হচ্ছে এসব থেকে আমরা খুব কমই শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। এভাবে একটি দুর্যোগের ওপর আরেকটি দুর্যোগ যখন আঘাত হানে তখন মানুষ অনেকটাই দিশেহারা হয়ে যায়। তবে সময় থাকতে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করলে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়তো কমানো যেতে পারে। এবারের আমফান নামের ঘূর্ণিঝড় দেশের ২০০ কিলোমিটারব্যাপী দীর্ঘ উপকূলে আঘাত হেনেছে। আগে থেকে এ ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত-মানুষের কাছে সংবাদমাধ্যম, সরকারি স্থানীয় সূত্রে পৌঁছেছে। আগে থেকে প্রস্তুতি থাকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাতের পরপরই উদ্ধার অভিযান ও স্থানীয় মানুষ দ্রুতগতিতে সহায়তা পাবে আশা করা যায়।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে এর গতিবেগ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার ছিল। বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় এটি প্রথম আঘাত হানবে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার হতে পারে। এর সাথে ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসঙ্কেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। আঘাত হানার পর উপকূল থেকে দেশের ভেতরে পৌঁছতে পৌঁছতে এর গতিবেগ কমতে থাকবে। সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলারকে আগে থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। উপকূলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্র এবং স্থানীয় স্কুল ভবনগুলোকে এর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করা যায়, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার অনেক আগেই প্রয়োজনীয় খবরাখবর জানার কারণে মানুষ যত দূর পারা যায় নিজেদের প্রস্তুতি নিতে পেরেছে।
এ সময় ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায় কৃষকের ক্ষেতে বোরো ধানসহ নানা ফসল ছিল। আগে থেকে ধান কেটে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছিল। অল্পসময়ের মধ্যে কৃষকরা কতটুকু ফসল কেটে আনতে পেরেছে আমরা জানি না। তবে এর ফলে কৃষকের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হবে এতে সন্দেহ নেই। তার ওপর রয়েছে প্রবল বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে বাড়িঘর ও অন্যান্য সহায় সম্পত্তি মিসমার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। আইলা সিডরের মতো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে শুনে স্থানীয় মানুষ বিপুল বিপদের আশঙ্কা করছেন। ঘূর্ণিঝড়ের সাথে থাকা জলোচ্ছ্বাসকে তারা এই বিপদের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন। উপকূলে যেসব বাঁধ রয়েছে এর বেশির ভাগ জরাজীর্ণ। এসব বাঁধ এর আগে আসা আইলা ঠেকাতে পারেনি। বাঁধ ভেঙে লোনাপানি ঢুকে বাড়িঘরের পাশাপাশি আবাদি জমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এখন পর্যন্ত অনেক আবাদি জমি ফসল উৎপাদনের উপযুক্ত হয়নি। অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে ডুবে রয়েছে। স্থানীয় মানুষ কোনোভাবে এ থেকে রক্ষা পায়নি। অনেক এলাকায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট রয়েছে। এর মধ্যে আমফানের আঘাত মানুষকে আরো দুস্থ ও অরক্ষিত করছে।
ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাত আসছে সাতক্ষীরার ওপর। আগে থেকে এ এলাকাটি আগের আইলা সিডরের আঘাতে ধরাশায়ী হয়ে রয়েছে। খুলনা ও বাগেরহাটের বিস্তৃত অঞ্চলেও এর ধ্বংস প্রলম্বিত হবে। এ এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন করে খাদ্য-পানীয় ও বাসস্থান নিয়ে সঙ্কটে পড়বে। ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই তাই বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তায় নেমে পড়তে হবে। আহত দুর্গত মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে কাজ করতে হবে। অন্য দিকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সেখানে নতুন করে প্রণোদনা দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement