সংক্রমণ পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি
- ২০ মে ২০২০, ০০:০০
বিপদ-আপদে ধৈর্য ধরতে হয়, থাকতে হয় ধীরস্থির। এসব জানার পরও আমরা এর ব্যত্যয় ঘটাই। অস্থির হয়ে পড়ি। এতে করে ভালোর পরিবর্তে ক্ষতির পরিমাণই বাড়ে। দেশে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের এসব আচরণ উৎকটভাবে ধরা পড়ছে করোনা মোকাবেলায়। বাংলাদেশে বেশির ভাগ নাগরিকের উপলব্ধিতে নেই, যেনতেনভাবে চাইলেই করোনা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন জ্ঞানভিত্তিক বিবেচনাবোধ। দেশীয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চলে; এর ব্যত্যয় ঘটানোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ নাগরিকের মধ্যে বেপরোয়াভাব লক্ষণীয় মাত্রায় ফুটে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় আমাদের চরম ঔদাসীন্য যে কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না; তা যেন সবাই ভুলেই গিয়েছিলাম; এতে করে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা আমলে না নেয়ার খেসারত ইতোমধ্যে দিতে শুরু করেছেন দেশবাসী।
দেশে করোনাভাইরাস ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। ১০ সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহেই আগের সপ্তাহের চেয়ে আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে এ ভাইরাস। এক দিনেই রেকর্ড ২১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে গত সোমবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৯ জনে। রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এক হাজার ৬০২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় কর্তৃপক্ষীয় পর্যায়ে উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। দেশে দ্রুত করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। করোনা শনাক্তে পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর সাথে সাথে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।
অথচ শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করে আসছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনা এই ভূ-খণ্ডে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন প্রাণহানির ঘটনা অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা সামাল দেয়া আমাদের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের এই সতর্কবাণীতে আমরা তেমন একটা গা করিনি; ফলে দেখা যাচ্ছে পাবলিক প্লেসে বেপরোয়া চলাফেরা; লোকে লোকরণ্য হয়ে পড়ছে। এ দিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ঈদ উদযাপনের জন্য বাড়ির পানে পাগলের মতো ছুটছে মানুষজন। এতে করে শহরাঞ্চলের মতো গ্রামাঞ্চলেও এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেখানে এই ভাইরাসের এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি; শুধু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা আত্মঘাতী প্রবণতা। মানুষের চলাচল যত বাড়বে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ততই বেশি হবে বলে আগেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ সরকারের চলাচলের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ ঠিকঠাক প্রতিপালন না করায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে।
দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে জনসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেহেতু এই রোগের কোনো ওষুধ নেই, তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। যেসব দেশ স্বাস্থ্যবিধি মেনেছে তারা সফল হয়েছে। আমাদের দেশেও সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর প্রথম দিকে লোকজন সরকারের নির্দেশনাগুলো মোটামুটি পরিপালন করেছে; কিন্তু তৈরী পোশাক কারখানা এবং ঈদ উপলক্ষে সীমিত আকারে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। কিছু শর্তের ভিত্তিতে মসজিদও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্ত রোগী। তারা সব জায়গায় গিয়ে অন্য মানুষকে সংক্রমিত করছেন। এ জন্য উপসর্গ থাকুক আর না থাকুক সবারই ঘরে থাকতে হবে। নইলে ঝুঁকি আরো বাড়বে। সর্বসম্মত মত হচ্ছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব মানতেই হবে। এই ভাইরাসের জন্য এটিই এখন একমাত্র ওষুধ। সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে প্রতিপালনে প্রয়োজনে কারফিউয়ের কথা ভাবতে হবে দেশ যারা পরিচালনায় নিয়োজিত তাদের।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা