২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিশ্বজুড়ে খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কা

সরকারকে সতর্ক হতে হবে

-

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে চলছে এক মহাযুদ্ধ। দেশে দেশে চলছে সঙ্গনিরোধ, লকডাউন। চলছে প্রতিষেধক উদ্ভাবনের জোর প্রচেষ্টা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি কত দিন চলবে কেউ জানে না। তাই বিভিন্ন দেশে মানুষ নিদারুণ আতঙ্কগ্রস্ত। বিত্তবানরা বাড়িতে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি খাদ্যসামগ্রী মজুদ করে রাখছেন। এই অশুভ প্রতিযোগিতায় কেবল যে ব্যক্তিবিশেষই নেমেছেন এমন নয়। অনেক দেশও খাদ্যসামগ্রী মজুদ করছে। রফতানি বন্ধ করছে কোনো কোনো রফতানিকারক দেশ। এর ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সরবরাহ বিঘিœত হতে পারে বলে মনে করছে জাতিসঙ্ঘ।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) এক রিপোর্টে বলেছে, লকডাউন পর্ব যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে অদূরভবিষ্যতে খাবার পাবেন না দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষ। এই পরিস্থিতি যাতে দেখা না দেয়, সে জন্য সব দেশের সরকারকে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহে কড়া নজরদারি রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। খাবার নিয়ে যাতে কোনো ধরনের কালোবাজারি না হয় সে দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, খাদ্যের প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে তা রফতানি নিষেধাজ্ঞা ডেকে আনতে পারে। এর ফলে বিশ্ববাজারে খাদ্যঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্য সরবরাহ যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সে জন্য সব পদক্ষেপ নিতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
কিন্তু এরই মধ্যে সেই পূর্বাভাস দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সম্প্রতি ভিয়েতনাম চালের নতুন রফতানি বিক্রয়চুক্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। শীর্ষ চাল রফতানিকারী দেশগুলোর তালিকায় ভিয়েতনামের অবস্থান তৃতীয়। চাল রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ কম্বোডিয়াও। একই আভাস দিয়েছে মিয়ানমারও। অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মোকাবেলায় চাল রফতানি কমিয়ে দিতে পারে দেশটি।
অন্য দিকে অনেক দেশ মনোনিবেশ করেছে বাড়তি আমদানির দিকে। ফিলিপাইন এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। তার পরও দেশটি খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কায় চালের আমদানি বাড়াচ্ছে। চীনও একই পথে হাঁটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বজুড়ে চালের রফতানি চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। থাইল্যান্ড চালের রফতানিমূল্য বাড়িয়েছে গত মার্চে।
তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থাÑ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বলছে, লকডাউন ও কোয়ারেন্টিনের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তিনটি সংস্থার প্রধানরা যৌথ বিবৃতিতে অবাধ বাণিজ্যপ্রবাহ অব্যাহত রাখা, বিশেষ করে খাদ্যঘাটতি যাতে সৃষ্টি না হয় এমন পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীদের নির্বিচার মজুদদারির প্রবণতার কারণে বাজারে খাদ্যের কৃত্রিম সঙ্কট দেখা দিতে পারে। নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষের উপার্জন এখন একরকম বন্ধ। কাজ নেই, তাই উপার্জনও নেই। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের অবস্থাও একই রকম। গার্মেন্ট শ্রমিকদের চলতি মাসের বেতনভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজিএমইএ। কিন্তু বাস্তবে সব কারখানার মালিক তা দিতে পারবেন কি না সেটি স্পষ্ট নয়। রফতানির আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সঙ্কটে পড়বে অনেক কারখানা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্রণোদনা সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষের কাছে কিভাবে এবং কতটা পৌঁছানো সম্ভব হবে, তার ওপরই নির্ভর করছে খেটে খাওয়া মানুষের আগামী জীবন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে লিখেছেন, করোনার কারণে বিশ্ব-অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তাতে আগামী কয়েক প্রজন্ম ভুগতে পারে। এই সঙ্কট মোকাবেলায় সব দেশের সমন্বিত পরিকল্পনা ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন কিসিঞ্জার। তিনি বলেছেন, ‘করোনা-সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে এর প্রভাবে সারা বিশ্বে আগুন জ্বলতে পারে।’
এই বাস্তবতা অনুধাবন করে সরকার বিশেষ করে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেÑ এটাই প্রত্যাশিত।


আরো সংবাদ



premium cement