২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্দিন

তাদের কথা ভাবতে হবে

-

বিশ্বের সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের একটি বড় অংশ বাস করেন সীমানার বাইরে, যাদের আমরা প্রবাসী শ্রমিক বলি। তাদের আয়ের ওপর দেশের কয়েক কোটি মানুষের নির্ভরতা ছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনীতি পুষ্ট ও ঋদ্ধ হচ্ছে। জানা যায়, এক কোটি ২৫ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে কাজ করেন। দেশে কাজ না পেয়ে তারা বিদেশবিভূঁইয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করেন। এই প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে কিংবা মালয়েশিয়ার গহিন অরণ্যে কিভাবে কাজ করেন, কত কষ্ট করে দেশে উপার্জিত অর্থ পাঠান, তার খোঁজ রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা খুব একটা রাখেন বলে মনে হয় না। বরং প্রতি মাসে স্ফীতকায় বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারের কথা বলে নিজেদের সাফল্য জাহির করেন। অথচ দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি তারা। তবে কোনো দেশের অর্থনীতি কতটা মজবুত সেটি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও ভোগের ওপর নির্ভর করে। নিজেদের উৎপাদন দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হলে সেটি স্বাবলম্বী অর্থনীতি। আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনো অনেকাংশে বিদেশনির্ভর। তাই বিশ্ব পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলে বিদেশনির্ভর অর্থনীতি আগে সঙ্কটে পড়ে। পোশাক শিল্প খাত থেকে আয় এবং প্রবাসী আয় দুটোই কমে যাওয়ার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রবাসী আয় ভয়াবহভাবে কমে গেছে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যেসব প্রবাসী বিদেশে অবস্থান করছিলেন তারা এখন বেকার হয়ে পড়ছেন। অনেকে এখন ঘরবন্দী। মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ প্রায় সব দেশেই প্রবাসী শ্রমিকরা বেকার বসে আছেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশেই বাংলাদেশীরা আছেন যারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। তারা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করতেন। কিন্তু করোনার কারণে এখন পুরোপুরি বেকার। কাজ না থাকায় আয়ও বন্ধ। ফলে দেশে থাকা পরিবার-পরিজনের কাছে অর্থ পাঠাতে পারছেন না। অনেকে ভিসা নবায়ন করতে না পারায় অবৈধ হয়ে পড়ছেন। পুলিশের ভয়ে এখন তারা চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে পারছেন না।
এক দিকে গত তিন মাসে যেমন বিপুল প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন; তেমনি সারা বিশ্ব বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশে জনশক্তি রফতানির কথা চিন্তাও করা যাচ্ছে না। প্রবাসী শ্রমিকরা যে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন, তার বড় প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত ফেব্রুয়ারির আগে প্রায় প্রতি মাসেই গড়ে ১৫ শতাংশের উপরে প্রবাসী আয় আসত। বিশেষ করে প্রবাসী আয়ের ওপরে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পর রেমিট্যান্স-প্রবাহ আরো বেড়ে যায়। সেই রেমিট্যান্স-প্রবাহ গত ফেব্রুয়ারির হিসাবে কমে ১০ শতাংশে নেমে গেছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। করোনার প্রভাবে রফতানি আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়ের প্রবাহে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। দীর্ঘ দিন ধরে দেশের অর্থনীতিতে একমাত্র রেমিট্যান্স সূচকই কার্যত সচল ছিল। প্রতি মাসেই গড়ে ১৫ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি ছিল রেমিট্যান্স-প্রবাহে। দেশে দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় বলা চলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে রেমিট্যান্স আসা। সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্স-প্রবাহ ভয়াবহ রকমে কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রেমিট্যান্স-প্রবাহের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আসে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
দেশের রফতানি আয় দীর্ঘ দিন ধরে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এখন রফতানি আয় কমতে কমতে গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একমাত্র সচল রাস্তা ছিল রেমিট্যান্স। এখন রেমিট্যান্সের অবস্থাও জেরবার। এ অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে তা ভয়াবহভাবে কমে যাবে। এর সরাসরি প্রভাবে চলতি হিসাবের ভারসাম্যসহ সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকতে হবে, যাতে তারা সহায়সম্বল হারিয়ে দেশে ফিরে না আসেন। এ জন্য দেশের দূতাবাসগুলোকে তৎপর হতে হবে। এমন দুর্দিনে দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি বাংলাদেশ দূতাবাসকর্মীদের সাহায্যের হাত বাড়ানো অতীব জরুরি। দূতাবাসগুলো থেকে সাধ্যমতো খোঁজখবর নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement