বাজার ব্যবস্থাপনা চালু রাখতে হবে
- ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
চলমান সমস্যা আরো বেশি জটিল হয়ে ওঠে আমাদের হুজুগে স্বভাবের কারণে। সরকার সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এমন খবর শুনেই ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ নিত্যপণ্য মজুদ করতে হন্যে হয়ে ওঠে। বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে মুহূর্তে টান পড়ে যায়। এই সুযোগে অনেক পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এখন শুরু হয়েছে উল্টো প্রবণতা। কিছু খাদ্যপণ্য যেগুলো নিত্যদিন উৎপন্ন ও বাজারজাত হয় সেগুলোর বিক্রি ও বিপণন একেবারে কমে গেছে। এ অবস্থায় কৃষক ও খামারিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বিপদে পড়েছেন। প্রতিদিন তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেকে ফতুর হয়ে যেতে পারেন।
খবরে জানা যাচ্ছে, কাঁচা তরিতরকারি, ডিম, মুরগি, দুধের চাহিদা একেবারে কমে গেছে। ঢাকার দুই কোটি মানুষ নিত্যদিন এসব পণ্যের ভোক্তা, তাদের বিরাট একটা অংশ ঢাকা ছেড়ে গেছেন। অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা ঘটেছে। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ফলে বাজারে এসব নিত্যপণ্যের ক্রেতা নেই। নিত্যভোগ্য এসব কৃষি ও খামারি পণ্য দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করা যায় না। এতে করে উৎপাদন স্বাভাবিক থাকায় অবিক্রীত পণ্য পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কৃষকরা সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছেন। তাদের উৎপাদিত তরিতরকারির দাম পাচ্ছেন না। সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে বগুড়ার সবজির বড় পাইকারি বাজার মহাস্থান ঘাটে মঙ্গলবারের সবজির দাম তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি কেজি মুলা দুই টাকা, বেগুন, টমোটা, শিম ও ফুলকপি পাঁচ টাকা, কাঁচামরিচ ১০ টাকা, গাজর আট টাকা, শসা ছয় টাকা ও বরবটি ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে এসব সবজির কোনোটির দাম ১০ টাকার নিচে ছিল না। বাস্তবে সবজির চাহিদা কমে যায়নি। কিন্তু বিপণন ব্যবস্থাপনায় ধস নামায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার বাজারে সবজির দাম কমলেও কৃষক পর্যায়ের চেয়ে অনেক বেশি দামে ঢাকায় তা বিক্রি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেও মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে। আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটি এ জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। খামারিদের অবস্থাও করুণ। বর্তমান অচলাবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পোলট্রি ও গরুর খামারিরা লোকসান দিতে দিতে শেষ হয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশ পোলট্রি খামার জাতীয় পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার খামার পর্যায়ে সাদা ডিম প্রতিটি চার টাকা ২০ পয়সা থেকে পাঁচ টাকা ৬০ পয়সা, বাদামি ডিম পাঁচ টাকা ২০ পয়সা থেকে পাঁচ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। ব্রয়লার মুরগির গোশত প্রতি কেজি বিভিন্ন জেলায় ৬০, ৮০ ও ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও এর দাম ৫০ টাকার নিচে নেমে গেছে। একইভাবে দুধের দাম অর্ধেকে নেমেছে। কোথাও আবার আরো কমে ২০ থেকে ২৫ টাকা দামেও বিক্রি হচ্ছে। গোশতের দাম কমে যাওয়ায় বাচ্চা ব্রয়লার মুরগি পালন নিয়ে বিপদে পড়ছেন পোলট্রি মালিকরা। খামারে বাচ্চা উঠালে প্রতিদিন এর পেছনে খাদ্য, বিদ্যুৎ, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ রয়েছে। বাজারে গোশতের দাম পড়ে যাওয়ায় পুঁজি উঠবে না দেখে অনেকে এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চা মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলছে। মানুষের খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়নি। করোনাভাইরাস ছড়ানোর আতঙ্কে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে গেছে। সারা দেশে বাজারঘাট এখনো খোলা রয়েছে। বাজারে ক্রেতার অভাবে নিত্যভোগ্য পণ্যের দাম পড়ে গেছে। ক্রেতাসাধারণের যৌক্তিক আচরণের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে প্রথমে অনেক খাদ্য মজুদ করেছি। এখন দৈনিক প্রয়োজনীয় খাদ্যও কিনছি না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সর্তকতা, তার মানে এই নয় আমরা নিত্যদিনের ভোগ্যপণ্যটি কেনা বন্ধ করে দেবো। বাজারে ভিড় এড়িয়ে কেনা কাটার কাজটি করতে হবে। এ জন্য দ্রুততার সাথে কাঁচাবাজারে কেনাকাটার কাজটি আমরা সারতে পারি। একইভাবে পাইকারি বাজার সুষ্ঠুভাবে চালু রাখার সুযোগ প্রশাসনকে দিতে হবে, যাতে করে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য আসতে পারে এবং সেগুলো খুচরা বিক্রেতারা কিনে নিয়ে যেতে পারেন। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করছে। করোনার বৈশ্বিক পরিস্থিতি বলছে অতিসত্বর মানুষের চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদকরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছেন তারা কত দিন লোকসান দিয়ে যাবেন। কাঁচা-তরিতরকারি এবং খামারে উৎপাদিত গোশত দুধ ডিমের বাজার আমাদের সচল রাখতেই হবে। আমাদের বিপণন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। সব সঙ্কটে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হন। এখন জরুরি ভিত্তিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। পণ্যের বাজারজাতকরণ এবং সেগুলো ভোক্তাপর্যায়ে কিভাবে পৌঁছানো যায় তার কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। কৃষক ও খামারিদের দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা