২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এই সময়েও লাম্পট্য ও মাদক সেবন

অপরাধের ব্যাপারে ছাড় নয়

-

করোনাভাইরাসের বেনজির তাণ্ডবে দুনিয়াজুড়ে লণ্ডভণ্ড অবস্থা। সারাবিশ্বে জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। মানবজাতি জানে না, ভবিষ্যতে কী ঘটবে। আমাদের বাংলাদেশেও অভিন্ন অবস্থা। পরিস্থিতি অবর্ণনীয় ও অভূতপূর্ব। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র-জীবনের সর্ব ক্ষেত্রেই স্বাভাবিকতা মুখ থুবড়ে পড়েছে। চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক গ্রাস করে নিয়েছে জনজীবনকে। অথচ এর মধ্যেও নরপশুদের ধর্ষণতাণ্ডব আর একশ্রেণীর মানুষের মাদকের মোহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে বিবেকবান নাগরিকরা উৎকণ্ঠিত না হয়ে পারেন না।
নয়া দিগন্তের এক খবরে জানা যায়, করোনা রোগী তল্লাশির কথা বলে, পুলিশের পরিচয়ে ঘরে ঢুকে এক কিশোরীকে অপহরণ করা হয়েছে। তার ইজ্জত হরণ করে নিয়েছে পাঁচজন লম্পট। গত শনিবার মধ্য রাতে জামালপুরের এক গ্রামে এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে। পরদিন জঙ্গল থেকে অসহায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এই গণধর্ষণের জঘন্য অপরাধে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের মাত্র একজন ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেছে। উল্লিখিত কিশোরীর বাবা জানান, রাত ৩টায় কয়েকজন এসে হাঁক-ডাক দিতে থাকে, ‘করোনাভাইরাসের রোগী আছে; তল্লাশি করা হবে।’ তারা নিজেদের ‘পুলিশ’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে। খোলা হলে পাঁচ-ছয় যুবক প্রথমে পানি চায়। পানি দেয়ার পর ওরা জোরপূর্বক মেয়েটিকে ধরে নিয়ে যায়। তখন বাধা পেলে নরপশুরা গলায় ছোরা ধরে মারধর করেছে। এদের মধ্যে একই গ্রামের ছেলেও রয়েছে।
একই দিনের পত্রিকায় একটি খবরÑ করোনার আতঙ্কে রাজধানীতে মাদকের কারবার চলছে আগের মতো যদিও কৌশল পাল্টানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতেও মাদকের বেআইনি ব্যবসায় থেমে নেই। রাজধানীতে বিভিন্ন কৌশলে মাদকদ্রব্য পাচার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে মাদকসেবীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে গাঁজা থেকে ইয়াবা পর্যন্ত, চাহিদামাফিক বিভিন্ন ধরনের মাদকপণ্য। চলমান অচলাবস্থার মধ্যেও মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা নগরীতে ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে মাদক বিক্রি ও সেবনের দায়ে। সরকারি সূত্র জানায়, মানবিক কারণকে অজুহাত হিসেবে অপব্যবহার করে মাদক বিক্রেতারা তাদের অমানবিক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এখন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। এ সুযোগে মাদক চক্রগুলো খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা ওষুধ কিংবা নিত্যপণ্য ক্রয়ের অজুহাতে মোটরবাইক, পিকআপ ভ্যান ও গাড়িতে করে মাদকের চালান পাচার করায় লিপ্ত। রাস্তা ফাঁকা পাওয়ায় এরা গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। লকডাউনের কারণে সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে না গেলেও মাদকসেবীরা অলিগলিতে ও রেললাইনে আড্ডা জমায়। সেখানে ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক সেবন করা হচ্ছে। গত রোববার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৫৫০ পিস ইয়াবা, ৫০০ পুরিয়া হেরোইন, ১২০ ক্যান মদ, ২১৮ বোতল ফেনসিডিল ও ১০০ গ্রাম গাঁজা আটক করা হয়েছে। কেউ কেউ হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে মাদক নিয়ে যাচ্ছিল বলে জানা গেছে। মাদক প্রতিরোধে বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে ধর্ষণতাণ্ডব ও মাদক সেবনের প্রবণতা কত ব্যাপক, তা সবার জানা। এসব দুর্বৃত্ত বর্তমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও ভয়াবহ অপরাধ থেকে বিরত হচ্ছে না। বরং মিথ্যাচার করে, জনমনে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অন্যায় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এদের দমনে কঠোরতার বিকল্প নেই। অপরাধের সাথে আপস হতে পারে না কোনো অবস্থাতেই। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবেন, এটিই জনগণের প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement