২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আইইডিসিআরের করোনা পরীক্ষা

একক কর্তৃত্ব ভয়ঙ্কর

-

করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর চিকিৎসা ও পরীক্ষার ব্যবস্থা এখন ঢাকা শহরে শুধু নয়, বিভাগীয় শহরেও করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দেশের ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিভাগীয় কমিশনারদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা লুটার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন অসৎ ব্যবসায়ীদের। সবাইকে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, জাতির এই দুঃসময়ে কেউ কোনো সুযোগ নিলে বা বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম করলে সহ্য করা হবে না। দরিদ্র মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে এবং তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ড পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কেউ অর্থশালী-সম্পদশালী হয়ে যাবে, সেটি কখনো বরদাশত করা হবে না।
ছুটি ঘোষণার কারণে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ, বিশেষ করে কৃষক, চা-শ্রমিক, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ প্রমুখ দুর্ভোগে পড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সামাজিক কর্তব্য হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। পরিকল্পিত উপায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিকতা ধরে রাখার কথাও বলেছেন তিনি। বলেছেন, সম্ভাব্য মন্দা পরিস্থিতির জন্য সতর্ক থাকার কথাও। জনসমাগম এড়াতে আসন্ন পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল করার কথাও তিনি বলেন। জাতীয় এই মহাসঙ্কটের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই দিকনির্দেশনা জাতির জন্য জরুরি ছিল। তিনি সেটি দিয়েছেন।
সমস্যা অন্যখানে। যে করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সঙ্কটের সৃষ্টি, সেখানে যথাযথ ব্যবস্থাপনার লক্ষণ আমরা দেখছি না এখনো। এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় যেসব রিপোর্ট প্রকাশ পাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। সন্দেহভাজন রোগীদের সবাইকে পরীক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেটি মোটেই হচ্ছে না। জেলা শহর পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন, বাস্তবতা তার থেকে বহু দূরে। এমনকি রাজধানী শহরেও পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না সম্ভাব্য রোগীদের অনেকে। পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়, সম্ভাব্য করোনা রোগীদের পরীক্ষা করার জন্য যে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তারা সে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। এর বর্ণিত কারণ হলো, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একক কর্তৃত্ব। আইইডিসিআর থেকে এসব ল্যাবে কোনো নমুনা (স্যাম্পল) পাঠানো হচ্ছে না। সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহের অনুমতিও দেয়া হচ্ছে না এসব প্রতিষ্ঠানকে। নমুনা সংগ্রহে কেন্দ্রীয়ভাবে পুলও তৈরি করা হচ্ছে না। দেশের যে ১০টি ল্যাব নির্দিষ্ট করা হয়েছে তার মধ্যে ঢাকায় মাত্র দু’টি ও চট্টগ্রামে একটি ল্যাবে চলছে পরীক্ষা। আরো ১৯টি ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই এগুলো কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হয়েছে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক একটি দৈনিককে বলেছেন, যখন আইইডিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না, তখন ওই ল্যাবগুলোর সহায়তা নেয়া হবে। আইইডিসিআর যে সম্ভাব্য রোগীদের সবার পরীক্ষা নিশ্চিত করতে পারছে না সেটি এরই মধ্যে প্রমাণিত। কিন্তু তারা কর্তৃত্ব ছাড়তে চাচ্ছেন না।
গোটা বিশ্ব যখন করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, তখন একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানের নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখার এই প্রবণতা আত্মঘাতী হতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাসের সন্দেহভাজন সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও পরীক্ষার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে আমরা সে দিকে যেতে পারছি না একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব ধরে রাখার কারণে। সন্দেহভাজনরা থেকে যাচ্ছেন পরীক্ষার বাইরে। এর ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন, জাতির জন্য ততই মঙ্গল।

 


আরো সংবাদ



premium cement