২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
বরিশাল মহানগরীতে পানির সঙ্কট

অবিলম্বে দূর করতে হবে

-

যে বরিশাল নদ-নদীতে ভরা, সেখানে এখন পানির অভাব! এই বিভাগীয় সদরের মহানগরে গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হতে না হতেই পানির তীব্র সঙ্কট শুরু হয়েছে। এই নগরীতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করা সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব হয় না বলে খবরে প্রকাশ। একটি জাতীয় দৈনিকের বরিশাল প্রতিনিধি এ প্রসঙ্গে আরো জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ থেকেও পানি মিলছে না। এমতাবস্থায় আগামী বর্ষার আগে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, বরিশাল শহরে প্রতিদিন পানির চাহিদা ছয় কোটি গ্যালন। তবে সরবরাহ করা যাচ্ছে দুই কোটি ৭০ লাখ গ্যালন, অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। তদুপরি বরিশাল নগরীর শতকরা ৫৫ ভাগ এলাকায় পানি সরবরাহের লাইন আজো বসানো হয়নি। কোনো কোনো ওয়ার্ডে লাইন থাকলেও পানি নিয়মিত সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গরমের মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই দুই-তিন দিন পরপর কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ফলে জনগণের ভোগান্তি ওঠে চরমে। কীর্তনখোলা নদী তীরে একটি ওয়ার্ডের আটটি গুচ্ছগ্রামের তিন হাজার পরিবার নিয়ত পানির সঙ্কটের শিকার। সেখানে সুপেয় পানি দূরের কথা, নিত্যদিন বিভিন্ন জরুরি কাজে ব্যবহারের পানিও পাওয়া যায় না। এর কারণ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। গুচ্ছগ্রামের একজন মহিলার বক্তব্য, খাবার পানি আনতে হয় এক কিলোমিটার দূর থেকে। সিটি করপোরেশনের দু’টি গাড়ি সকালে যে পানি দিয়ে যায়, তা আট গুচ্ছগ্রামের চাহিদার চেয়ে অপর্যাপ্ত। স্থানীয় কাউন্সিলর দাবি করেছেন, গভীর নলকূপে পানি তোলার জন্য ‘চেষ্টা চলছে’।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই নগরীতে পানির গ্রাহক ২৯ হাজার এবং প্রতিদিন তাদের জন্য দুই কোটি ৭০ লাখ গ্যালন পানি সরবরাহ করতে হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, যাদের পানির লাইন নেই, তারা সঙ্কটে ভুগছেন। তার মতে, পানির স্তর আগের পর্যায়ে না থাকায় পুরনো নলকূপে পানি উঠছে না। গ্রাহকদের নিজস্ব উদ্যোগে বসানো গভীর নলকূপ থাকলে পানির অভাব হয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু এভাবে পানি উত্তোলন করা কতটা আইনসম্মত এবং এর ফলে স্থানীয় অন্যান্য গ্রাহক বঞ্চিত হচ্ছেন কি না, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বরিশাল নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির অভাব পূরণের জন্য ৫৬ কোটি টাকা খরচ করে ২০০৯-১০ সালে রূপাতলী ও বেলতলাতে দু’টি পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক নির্মাণত্রুটি এবং বড় ধরনের অনিয়মের দরুন এক দশকেও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এগুলো বুঝে নেয়নি। ইতোমধ্যে বেলতলার প্লান্টের একাংশ নদীতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই দু’টি প্লান্ট নির্মাণ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। বেলতলার শোধনাগার নির্মাণের পরপরই, প্রায় চার বছর আগে নদীভাঙনের কবলে পতিত হয়। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এভাবে বিলীন হওয়ায় চালু হওয়ার আগেই এটি সক্ষমতা অনেকটা হারিয়ে ফেলেছে। অন্য দিকে রূপাতলীর প্লান্টের তিনটি স্তর একসাথে চালাতে ৪৫০ কেভি বিদ্যুতের প্রয়োজন হলেও সেখানে স্থাপিত সাব-স্টেশনটির ক্ষমতা এর প্রায় অর্ধেক। ফলে এই প্লান্ট চালু করা সম্ভব হয়নি আজো। অর্থাৎ ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং সরকারি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তৈরি করা হলেও, পানির শোধনাগার দু’টি দীর্ঘ ১০ বছরেও চালু করা যায়নি। এই বিপুল অর্থ এভাবে ‘পানিতে যাওয়া’র বা অপচয় হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা আশা করি, বিলম্বে হলেও এখন কর্তৃপক্ষের বোধোদয় ঘটবে এবং যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি, বরিশালবাসীর পানি সঙ্কট মোচনের স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement