২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অর্থনীতির বিদেশনির্ভরতা

দরকার নানামুখী পদক্ষেপ

-

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দু’টি খাত প্রবাসী আয় ও পোশাক রফতানি। দুটোই পুরোপুরি বিদেশনির্ভর। করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এ দেশ থেকে। এ অবস্থায় পোশাক খাতের প্রায় সব রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। বুধবার পর্যন্ত ২৫০ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়ে গেছে। উদ্ভূত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে বিদেশে জনশক্তি রফতানির কথা চিন্তাও করা যায় না। অথচ বিগত তিন মাসে বিপুল প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইউরোপের অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে গেছে। এর ফলে প্রবাসী আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। আর দেশের কলকারখানার উৎপাদনও সীমিত হয়ে গেছে। কবে নাগাদ অবস্থা স্বাভাবিক হতে পারে তা বলা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষের আয়ের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য বিপুল সহযোগিতার প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার তার ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ তহবিলের অর্থ দিয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হবে। পোশাক খাতের শ্রমিকরা এর দ্বারা উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রী সাধারণ সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির কথাও তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরকেন্দ্রিক লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তারা এখন গ্রামমুখী। ভাষণে সরকারপ্রধান বলেছেন, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ‘ঘরেফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য ও নগদ অর্থ দেয়া হবে। আর বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আমাদের দেশে বিপুল গৃহহীন ভূমিহীন এবং দৈনন্দিন খাবার সংগ্রহ করতে পারেন না এমন মানুষ রয়েছেন। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে বিপুল মানুষ আগে থেকে সুবিধা পেয়ে আসছেন। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন এসব অভাবী মানুষের সাথে আরো লাখ লাখ অভাবী যুক্ত হবেন। তাদের দৈনিক ভিত্তিতে সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে। তাদের সহায়তার জন্য একটা আলাদা তহবিলের প্রয়োজন। যেমন পোশাক শিল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রকৃত অভাবী লোকদের চিহ্নিতকরণ। আমাদের দেশে এটা একটা সাধারণ অনিয়ম যে, দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের কারণে প্রকৃত অভাবীরা বঞ্চিত হয়ে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমন ব্যবস্থা সরকারের গ্রহণ করা উচিত যাতে সরকারি সাহায্য জায়গামতো যথাসময়ে পৌঁছায়। অর্থাৎ প্রকৃত অভাবী লোকেরা সরকারি সাহায্য নিশ্চিতভাবে পেতে পারেন।
কোনো দেশের অর্থনীতি কতটা মজবুত সেটি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও ভোগের ওপর নির্ভর করে। দেশের উৎপাদন দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হলে সেটি স্বাবলম্বী অর্থনীতি। আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনো বিপুলভাবে বিদেশনির্ভর। দুর্ভাগ্য হলো, বিশ্ব পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলে বিদেশনির্ভর অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে পড়ে। পোশাক শিল্প খাত থেকে আয় এবং প্রবাসী আয় দুটোই কমে যাওয়ার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে আমাদের জাতির জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার প্রধান উপায় হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া । উৎপাদনকে কেন্দ্রীভূত না করে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতির পর্যাপ্ত প্রসারের মাধ্যমে মানুষকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। আপাতত দরিদ্র, অভাবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য উদারভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এ কাজে সরকার বিত্তশালীদেরও আহ্বান জানাতে পারে। তাহলে আসন্ন সঙ্কট মোকাবেলা করা সহজ হবে।


আরো সংবাদ



premium cement