২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সিলেট সীমান্তে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য

কঠোর হস্তে দমন করতে হবে

-

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে সিলেট অঞ্চলের অবস্থান। এর সাথে সীমান্ত রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একাধিক প্রদেশের। ইদানীং সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান চলছে ব্যাপকভাবে। অভিযোগ আছে, সীমান্তের ওপার থেকে অবাধে অনুপ্রবেশ করছে মাদকসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর পণ্যÑ এমনকি গোলাবারুদ। এ ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা ‘সীমান্ত হাট’কে ব্যবহার করছে বলেও জানা গেছে।
একটি দৈনিক পত্রিকায় এ প্রসঙ্গে একটি হাটের উল্লেখ করে বলা হয়, দু’দেশের সীমান্তবর্তী জনপদের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্যই এ হাটের প্রবর্তন। সপ্তাহে দু’দিন ঘণ্টা তিনেক চলে হাটটি। কিন্তু অসৎ ব্যবসায়ীরা এ সুযোগের অপব্যবহার করে মাদকদ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্রের চালান পর্যন্ত এ দেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বেআইনি এসব অস্ত্র হাতবদলের মাধ্যমে সিলেটে তো বটেই, বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকাতেও অপরাধীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার তথ্য মিলেছে। জানা যায়, সম্প্রতি বহিষ্কৃত হয়েছেন ক্ষমতাসীন মহলের এমন এক যুবনেত্রীকে গ্রেফতারের পর তিনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জেরার মুখে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি মতে, তার দু’জন সহযোগী সিলেটের জাফলং ও কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র এনে রাজধানীতে পৌঁছাতেন একাধিক বিক্রেতার কাছে। সীমান্তের ওপার থেকে রিভলবার, একে-২২ ও কাটা রাইফেল এনে ঢাকার ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। আলোচ্য নেত্রী এসব দেখাশোনা করতেন। সিলেটের যে ব্যক্তির সাথে পরিচয়ের সূত্রে তিনি অস্ত্রের বেআইনি কারবারে নিজেকে জড়িয়েছেন, সে লোকের নাম জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তবে আলোচিত নেত্রী ধরা পড়ার পরই লোকটি আত্মগোপন করেছে। আজো ধরা পড়েনি নেত্রীর উল্লিখিত সহযোগীদ্বয়ও।
এ দিকে, বিজিবি সূত্রে প্রকাশ, ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদকদ্রব্যের চোরাচালানের নতুন রুট হিসেবে চোরাকারবারিরা বেছে নিয়েছে সিলেটকে। দেশ থেকে পাচার হচ্ছে খাদ্যপণ্য আর পাশের দেশ থেকে আসছে মাদক ও অস্ত্র। এ ধরনের অপরাধ দমনের লক্ষ্যে আমাদের সীমান্তরক্ষীরা তৎপর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তের দিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজর বেশি থাকায় বেআইনি অস্ত্রের কারবারিরা সিলেটের বিশেষত গোয়াইনঘাট সীমান্তকে নতুন রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি এ রুটের অস্ত্রব্যবসায়ীদের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয় রাজধানীতে। তাদের কাছে পাওয়া যায় ১৬ রাউন্ড গুলিসমেত তিনটি অত্যাধুনিক রিভলবার। বিজিবি সিলেট সীমান্তে অভিযান চালাতে গিয়ে রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। চোরাচালান প্রতিরোধে এলাকাবাসীর আরো সহায়তা দরকার।
জানা যায়, সিলেট সীমান্তে চোরাইপথে ঢুকছে ভারতীয় মোটরবাইক, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক সামগ্রীÑ সেই সাথে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মতো মাদক এবং আগ্নেয়াস্ত্র। বিজিবিকে হেঁটে হেঁটে টহল দিতে হয় সীমান্ত এলাকায়। কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ছাড়াও জৈন্তাপুর, তামাবিল, বিছনাকান্দি ও জাফলংয়ের মতো পর্যটন স্পটগুলোতেও চোরাকারবারিরা তৎপর। বৃহত্তর সিলেটের চারটি জেলার সীমান্তেই চোরাকারবার এখন জমজমাট। জানা গেছে, মিয়ানমারের ইয়াবা ভারতের মনিপুরের ইমফল এবং আসামের শিলচর হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের সংলগ্ন ভারতীয় এলাকা করিমগঞ্জে আনা হয়। তদুপরি করিমগঞ্জে একটি ইয়াবা কারখানা আছে। সিলেটের পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি, মাদকের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
সবার প্রত্যাশা, সিলেটসহ দেশের সব সীমান্তে মাদক ও অস্ত্রসহ নানা ধরনের বেআইনি পণ্যের চোরাকারবার সম্পূর্ণ বন্ধ করার জন্য প্রশাসন এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement