২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কোভিড-১৯ ও রাসূলের শিক্ষা

ঈমান ও যুক্তির ভারসাম্য বোঝা জরুরি

-

কোভিড-১৯ মহামারী পুরো বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে। আত্মরক্ষায় করণীয় নির্ধারণে মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ। দেশে দেশে সরকারগুলো নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বিশ্ববাসীকে সবচেয়ে কার্যকর পরামর্শ দেয়ার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। চলছে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ পরিস্থিতি। এ রোগের প্রতিষেধক এখনো উদ্ভাবন হয়নি। তবে এ থেকে বেঁচে থাকার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসাবে বিশেষজ্ঞরা একটিমাত্র রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভালো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং পৃথকীকরণ বা অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনুশীলন হলো কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আমরা এটিকে বলছি, সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি। মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সরকারগুলো মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। পুরো দেশ লকডাউন করছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী নামিয়ে নিশ্চিত করছে, যাতে মানুষ অকারণে ঘরের বাইরে না আসতে পারে।
কিন্তু আমাদের দেশে পরিস্থিতি অনেকটা ভিন্ন। এখানে বেশির ভাগ মানুষ পাক্কা ঈমানদার। তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে হাত-পা ছেড়ে বসে থাকতে বেশি পছন্দ করেন। ঈমান পোক্ত হলে করোনাভাইরাস কিছুই করতে পারবে না। এমনই তাদের বিশ্বাস। অথচ মহান আল্লাহ ও তার রাসূল সা:-এর বক্তব্য কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বর্তমানে কোভিড-১৯ রোগে সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পড়া ইতালিতে অবস্থানকারী রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ক্রেগ কনসিডাইনের একটি লেখা সম্প্রতি বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সাময়িকী নিউজ উইকে প্রকাশ পেয়েছে। তাতে ড. ক্রেগ বলছেন, ‘আপনি কি জানেন, মহামারীর সময় আরো ভালো স্বাস্থ্যবিধি ও পৃথকীকরণের পরামর্শ কে দিয়েছিলেন? ১,৩০০ বছর আগে ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা: ছিলেন সেই ব্যক্তি। কোভিড-১৯-এর বিস্তার রোধ ও তা মোকাবেলার জন্য মুহাম্মদ সা:-এর পরামর্শই সবচেয়ে যথাযথ। মুহাম্মদ সা: বলেছিলেন : ‘আপনি যদি কোনো দেশে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কথা শুনে থাকেন তবে সেখানে প্রবেশ করবেন না; তবে যদি আপনি সেখানে অবস্থানের সময় মহামারীটি ছড়িয়ে পড়ে তবে সে স্থান ত্যাগ করবেন না।’ তিনি আরো বলেছিলেন : ‘সংক্রামক রোগকে সুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে।’
ড. ক্রেগ তার লেখায় বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা: মানবজাতিকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে এমন কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছিলেন। নিচের হাদিস বা হজরত মুহাম্মদ সা:-এর বক্তব্যটি বিবেচনা করুন : ‘পরিচ্ছন্নতা হলো ঈমানের অঙ্গ।’ ‘ঘুম থেকে ওঠার পরে আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন; ঘুমের সময় আপনার হাত কোথায় গেছে তা আপনি জানেন না।’ ‘খাওয়ার আগে এবং পরে হাত ধোয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে।’
আর যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন কী হবে? মুহাম্মদ সা: লোকদের সর্বদা চিকিৎসা ও ওষুধপত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘চিকিৎসা গ্রহণ করো’। ‘মনে রাখতে হবে আল্লাহ এমন কোনো রোগ দেননি যার প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থাও তিনি দেননি। এর একমাত্র ব্যতিক্রম হলো বার্ধক্য।’
এই হলো ইসলামের স্বাস্থ্যবিধি ও সংক্রামক রোগে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা। কিন্তু আমাদের তথাকথিত ঈমানদার লোকেরা আল্লাহর ওপর ভরসা এবং দোয়াকালাম নিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে মূলত ইসলামের বিপরীত শিক্ষাই দিচ্ছে মানুষকে। সতর্কতা বিষয়ে ইসলামের নবীর অনুসৃত নীতিও ড. ক্রেগ তার লেখায় উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি (মুহাম্মদ সা:) জানতেন কখন যুক্তির সাথে বিশ্বাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। নবম শতাব্দীর পার্সিয়ান পণ্ডিত আল-তিরমিজির বলা নিম্নলিখিত কাহিনীটি বিবেচনা করুন। ‘একদিন, নবী মুহাম্মদ সা: এক বেদুইনকে লক্ষ করলেন যে তার উটটি বেঁধে না রেখে চলে যাচ্ছে। তিনি বেদুইনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি তোমার উটটি বেঁধে রাখো না কেন?’ বেদুইন জবাব দিয়েছিল, ‘আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছি।’ নবী তখন বললেন, ‘আগে তোমার উট বেঁধে রাখো, এরপর আল্লাহর ওপর ভরসা করো।’ ঈমানদার হতে হলে ঈমান ও যুক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার স্থানকাল বুঝতেই হবে।


আরো সংবাদ



premium cement