২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বাংলাদেশেও

অতি জরুরি ব্যবস্থাও নেই

-

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ তাণ্ডব অব্যাহত আছে। মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৩ হাজার এবং আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দেশে দেশে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলো রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এবং এতে আক্রান্তদের বাঁচাতে। মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে ঘরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে। রাশিয়া তার নাগরিকদের বলেছে, ১৫ দিন ঘরে স্বেচ্ছা অবরোধে থাকুন, না হলে পাঁচ বছরের জন্য কারাগারে থাকতে হবে। এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে আরো অনেক দেশ। জনগণকে সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত করতে সার্বিক লকডাউনের এই ব্যবস্থাটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ ও সফলতা পেয়েছে চীন, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও হংকংয়ের মতো দেশে। ভারতও ‘জনতার কারফিউ’ নাম দিয়ে সামাজিক অবরোধ বলবৎ করেছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে করোনার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে মসজিদে নামাজের জামাত পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সরকার এখনো এটিকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে না। মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হয়, এই পৃথিবীতে নয়, তারা যেন মহাকাশে বসবাস করেন। সরকারের কর্মকাণ্ডে সেই গুরুত্বহীনতার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তারা দেশজুড়ে সতর্কতা অবলম্বন তো দূরের কথা, যেখানে প্রয়োজন সেখানেও লকডাউন করছেন না। এর মধ্যে দেশে ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বীকার করা হয়েছে। এবার বিদেশ থেকে যে ২০-২৫ হাজার মানুষ দেশে ফিরেছেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, মাত্র সাড়ে ৩০০ মতো বিদেশফেরত বাংলাদেশী হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। বাকি সবাই অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মানুষের সাথে মেলামেশা করছেন এবং হয়তো নিজের অজান্তে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
সরকার বিমানবন্দরে নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু মানুষকে সতর্কতার নিয়মবিধি মানতে বাধ্য করছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মীরা যখন আত্মীয়দের বলে দিচ্ছেন, বিদেশ থেকে ফিরে আসা লোকটিকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে, তার থেকে দূরে থাকতে হবে ইত্যাদি, তার সামান্য পরেই হয়তো দেখা গেল আত্মীয়রা সবাই তাদের বিদেশফেরত স্বজনকে বুকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করছেন। তাকে নিয়ে যেন উৎসবে মেতে উঠেছেন।
নাগরিক সচেতনতার অভাব আছে সত্যি। কিন্তু সরকারের ব্যর্থতা তার চেয়েও বড়। তারা সন্দেহভাজন লোকদেরও করোনার পরীক্ষা নিশ্চিত করতে পারেননি। দেশের একটিমাত্র পরীক্ষাগারে আজ পর্যন্ত মাত্র ৭০০’র মতো মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে। লাখো মানুষ পরীক্ষা করানোর জন্য আবেদন জানিয়ে বসে আছেন। সম্ভাব্য রোগীদের টেলিফোন করে জানানোর জন্য বেশ কয়েকটি হটলাইন নম্বর জানানো হলেও বাস্তবে সেগুলোতে কেউ সংযোগ পাচ্ছেন না। অনেককে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব ব্যর্থতার চিত্র প্রতিদিন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে সেবাদানকারী চিকিৎসকদের নিরাপদ থাকার জন্য অতি জরুরি পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট বা ডাক্তারি পোশাক দিতে পারেনি সরকার। কোথাও কোথাও ডাক্তাররা নিজেদের উদ্যোগে এ পোশাক বানিয়ে নিয়েছেন। আর পাঁচটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে চার লাখ পোশাক তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবে মানুষ স্ব-উদ্যোগেই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে করোনার ভয়াবহতারোধে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন বিজ্ঞানী করোনা পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করেছেন নিজের উদ্যোগে। অনেকে স্বেচ্ছায় পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো, করোনার লক্ষণাক্রান্ত প্রতিটি মানুষের পরীক্ষা নিশ্চিত করা। সেটি কিন্তু মোটেও হচ্ছে না। পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। এখন সবচেয়ে জরুরি, মানুষকে কোয়ারেন্টিনে বা সঙ্গরোধে রাখতে বাধ্য করা। সে জন্য প্রয়োজনীয় লকডাউনের চিন্তাভাবনা নেই। জরুরি হলো মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ, জীবাণুনাশকের যথেষ্ট জোগান নিশ্চিত করা। অথচ এসব প্রতিটি জিনিস বাজারে দুর্লভ হয়ে পড়েছে।
মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, তারা হঠাৎ ধর্মভীরু হয়ে পড়েছেন। সবকিছু সৃষ্টিকর্তার হাতে সোপর্দ করে ঘরে হাত গুটিয়ে বসে থাকা ইসলামের শিক্ষা নয়। এখনো সক্রিয় না হলে পরিস্থিতি যখন সামাল দেয়ার পর্যায় পেরিয়ে যাবে তখন দায় কিন্তু সরকারকেই নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement