১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি

মধ্য ও নিম্নবিত্তরা বিপাকে

-

গড় হিসাবে দেশের মানুষের আয় বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। উল্টো সমানতালে বাড়ছে ধনী-গরিবের আয়বৈষম্য। দেশের বেশির ভাগ সম্পদ কিছু ব্যক্তির কাছে কেন্দ্রীভূত। ফলে সম্পদশালী আরো ধনী হচ্ছেন; সম্পদহীন হচ্ছেন আরো গরিব। অর্থনীতিতে যে সূচকে আয় ও সম্পদের বৈষম্য পরিমাপ করা হয়; তাকে বলে গিনি কো-ইফিসিয়েন্ট। ওই সূচক অনুসারে ২০১০ সালে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশের আয় ছিল দেশের মোট আয়ের দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দশমিক ২৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশের আয় ছিল মোট আয়ের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। কিন্তু ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশে। এ ছাড়া শুধু আয় নয়, সম্পদে বৈষম্য আরো বেশি। দেশে বর্তমানে একটি প্রবণতা লক্ষণীয়Ñ জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বাড়ছে; ওই অনুপাতে আয় না বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা পড়েছেন বিপাকে। পারিবারিক ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আয় ও ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। আয় কমে যাওয়ায় তাদের জীবনমানের ক্রমাবনতি সুস্পষ্ট।
এমন প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে সব সময় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ভোগান্তিতে ফেলে। সাম্প্রতিক সময়ে তা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য এবং পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের সবজি ও মসলার বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আগে সব ধরনের মসলার পেছনে যা ব্যয় হতো এখন তারও চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে শুধু পেঁয়াজের পেছনে। বারবার জ্বালানি ও গ্যাসের দাম বাড়ায় বেড়েছে বাসভাড়া ও যাতায়াত খরচ। শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় বেড়েছে পণ্যমূল্যও। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। এর প্রমাণ মেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জরিপে। ক্যাবের তথ্যমতে, গত এক বছরে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে আয় বেড়েছে ৪-৬ শতাংশ। আয় আর ব্যয় ব্যবধান বেড়েছে ১০-১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস, নিত্যপণ্য, বাড়িভাড়া, যাতায়াত ব্যয় বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ। পারিবারিক ব্যয় মেটাতে গিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের কমে যাচ্ছে সঞ্চয়। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ডিসেম্বরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে আরেক ধাপ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশে, যা নভেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের মূল্যস্ফীতির হিসাবে গরমিল রয়েছে।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও মিলমালিক চক্রের নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্যের বাজার। পর্যাপ্ত উৎপাদন, আমদানি, মজুদ থাকার পরও এরই মধ্যে চাল, ভোজ্যতেলসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। রমজান সামনে রেখে ছোলা, ডালসহ আরো কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা। আড়তদার ও মিলমালিকদের আধিপত্য চালের বাজারে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজির কবলে ভোজ্যতেল। চিনির বাজার অযৌক্তিকভাবে অস্থির করে তোলার পাঁয়তারা চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে শুধু বলা হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের এমন কথায় সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না। পেঁয়াজের দাম নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে; তাতে আস্থা রাখার কিছু আছে বলে মনে হয় না। সরকারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। সবার প্রত্যাশা, দেশের সর্বস্তরের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে সরকার। নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে কোটারি স্বার্থের পরিবর্তে গণমানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়াসী হবে। এতে বিপাকে পড়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ স্বস্তি পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement