২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
বায়ুদূষণ

আশু সতর্কতা জরুরি

-

বায়ুদূষণ বাংলাদেশে খুবই বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে সর্বশেষ যে খবর পাওয়া যাচ্ছে সেটি ভয়াবহ। বায়ুদূষণ পুরো দেশটিকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলতে পারে। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ৩০টি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে। এগুলো সত্যিই যদি এক যুগের মধ্যে চালু হয় তাহলে বাংলাদেশ ‘কার্বন বোমা’ বিস্ফোরণের শিকার হবে। অর্থাৎ ভয়াবহ কার্বন বোমা বিস্ফোরণের ফলে পরিবেশ প্রকৃতি ও মানুষের ওপর যে ধ্বংসলীলা সৃষ্টি করবে, এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও একই রকম ধ্বংসলীলা চালাবে বাংলাদেশের মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের ওপর। বায়ুদূষণের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনই এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে। এ দেশে মানুষের উচ্চ হারে রোগব্যাধির অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ। এ অবস্থায় আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। এ দেশের আলো বাতাসকে আমরা বসবাসের উপযোগী রাখার চেষ্টা চালাব; না নিজেদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটিকে আমরা একটি নরকে পরিণত করব, সেই সিদ্ধান্ত এখন আমাদের হাতে।
বায়ুর মান নির্ধারণ করার জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি মুহূর্তের বিশ্বের কোথায় বায়ুর মান কেমন সেটি জানা যাচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা সারা দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বায়ুদূষণের ফলে প্রথমে আক্রান্ত হয় ফুসফুস। কয়েক বছর আগে ঢাকা শিশু হাসপাতাল একটি জরিপ চালায়। ঢাকার ১১টি এলাকার ৫ শতাধিক মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। তাতে দেখা যায় ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ মানুষ কোনো-না-কোনো মাত্রায় ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত। শিশু ও বৃদ্ধদের ফুসফুসের রোগ তুলনামূলক বেশি। এসব রোগের প্রধান কারণ দূষিত বাতাস। ঢাকায় যানবাহন, কলাকারখানা ও নির্মাণকাজের পরিধি যে আকারে বেড়েছে তাতে বায়ুর অবস্থা আগের চেয়ে এখন আরো অনেক বেশি খারাপ। বায়ুর মান নির্দেশক সংস্থাগুলোর হিসাবে ঢাকার অবস্থান দিল্লির পরেই রয়েছে। ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে আরো বেড়েছে।
সারা বাংলাদেশে বাতাসে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম) বেড়ে যাচ্ছে। অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রথমে ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরপর কিডনি বিকল করে দেয়াসহ আরো বিভিন্ন রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের বাতাসে সবচেয়ে ক্ষতিকর পিএমের মাত্রা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেয়া মানের চেয়ে ৬ গুণের বেশি। দেশে একমাত্র কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ায়। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে আশপাশের বায়ু ও পানি মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। সেখানকার বায়ু ও পানির দূষণের ব্যাপারটি প্রমাণিত। এ অবস্থায় আরো কয়েক ডজন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে সারা দেশ প্রকৃতপক্ষে একটি বড় গ্যাস চেম্বারে পরিণত হবে।
নির্মল পরিবেশের জন্য পরিবেশের যতœ নেয়া দরকার। সে জন্য সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে সরকারকে। বায়ুদূষণের জন্য দায়ী ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণযোগ্য। অনেক ক্ষেত্রে আইনও রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এসব আইনের প্রয়োগ নেই। কলকারখানার দূষণ, বাড়িঘর নির্মাণে দূষণÑ এগুলো নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে যেমন সচেতনতা নেই, তেমনই সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো সতর্কতা নেই। উন্নয়নের নামে যে সীমাহীন বাড়াবাড়ি আমরা করতে যাচ্ছি, তার পরিণাম ভয়াবহ। ব্যাপারটি অবশ্যই সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে। এসব দূষণ এমন পর্যায়ে যাবে, যার হাত থেকে কেউই রক্ষা পাবে না। সুতরাং নিজেদের পরিণতির কথা ভেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement