১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
লুটপাটে অস্থির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে

-

দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই মূলত ছাত্রদের পাঠ্যক্রম পরিচালনা করার মূল উৎস। এর বাইরে রয়েছে ততোধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। পাঠ্যক্রম পরিচালনায় এগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। দেশের ছাত্রদের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নজর মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ, তারাই কেবল গত্যন্তর না দেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। কিন্তু এগুলোতে অতিমাত্রিক খরচের কারণে দেশের সাধারণ স্বল্প আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়তে পারেন না।
এ দিকে ক্ষমতাসীনদের লুটপাট আর নানা অনিয়মের ফলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন চলছে চরম বিশৃঙ্খলা আর অস্থিরতা। দেশের সবক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই চলছে কোনো-না-কোনো ধরনের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগবাণিজ্য, অব্যবস্থাপনা এবং লুটপাটের মতো অস্থির বিশৃঙ্খলার নানা ঘটনা। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পাঠদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের দাপটে কোনো কিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে দেয়া হচ্ছে না। বেশ কয়েক বছর ধরেই অবাধে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে একধরনের কায়েমি চাঁদাবাজির মাধ্যমে লুটপাট। তা ছাড়া ছাত্রভর্তির ক্ষেত্রেও ক্ষমতাসীনদের কোনো-না -কোনো পক্ষ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজি ও দলবাজি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি উন্নয়ন কাজের একটা অংশ চলে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ছাত্রসংগঠনের নেতাদের পকেটে। কয়েক বছর ধরে অনেকটা ওপেন সিক্রেট হিসেবেই তা চলছে।
অতি সম্প্রতি আলোচনায় আসে ছাত্রলীগ নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কেলেঙ্কারির নানা খবর। তবে এ ধরনের কেলেঙ্কারি নতুন কিন্তু নয়। খবরে প্রকাশ, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক শিক্ষকেরাও জড়িয়ে পড়েছেন এসব কেলেঙ্কারির সাথে। ফলে তাদের পদত্যাগের দাবিও ত্বরান্বিত হচ্ছে এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, বিভিন্ন মহলের সমাবেশ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে ছাত্রলীগ নেতাদের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি করানোর যে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন কিছু শিক্ষক, তা নিয়ে এখন গণমাধ্যমে চলছে প্রবল বিতর্ক। এর সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবি উঠেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির-উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অপর দিকে, গত কয়েক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ব্যবসায় অনুষদের ডিনের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন যৌথ কর্মসূচি পালনকালে ছাত্রলীগের হামলা হয়। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ছাত্ররা মানববন্ধন পালন করে চলেছেন।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণকাজ কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির ঘটনায় দেশবাব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনার জের হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এ দিকে, শোভন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। জোরালো দাবি উঠেছে গোলাম রাব্বানীর ডাকসুর জিএস পদ থেকে পদত্যাগের কিংবা তাকে বহিষ্কারের। এ ছাড়া সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিন শিক্ষক। তাদের অভিযোগ, ভিসির আদেশে তাদের বেতন থেকে ২১৭ টাকা করে কেটে রাখা হয়েছে। গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বহিষ্কার নিয়ে চলছে ভিসিবিরোধী আন্দোলন।
এভাবে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম চলছে বলে দাবি করেছে ঢাবির সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এভাবে যদি দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা চলে, তবে আমাদের উচ্চাশিক্ষার ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান আজ হাজারের তালিকায় নেই কেন?


আরো সংবাদ



premium cement