২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
মানবাধিকার নিয়ে জাতিসঙ্ঘের উদ্বেগ

অভিযোগ খতিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে

-

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর অবস্থায় নেই, এতে কারো দ্বিমত নেই। যদিও দৃশ্যত মনে হবে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত। তবে এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশে রাজনৈতিক নির্যাতন-নিপীড়ন মুক্ত নয়। এখানে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর সরকারের দমননীতি প্রবল। অনেক ক্ষেত্রে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা মাঝে মধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে রিপোর্ট প্রকাশ করছে। কিন্তু সরকারপক্ষের একই জবাব, এসব রিপোর্টের কোনো সত্যতা নেই। অনেকটা রিপোর্টের অভিযোগগুলো খতিয়ে না দেখেই সরকারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো অস্বীকার করা হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনুশীলন ঠেকানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও নেয়া হয় না। ফলে বলা যায়, সরকারপক্ষ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটিয়ে চলেছে। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর মতে, বাংলাদেশে নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি সিএইচটি (কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার)। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ যাচাই করে দেখতে নিরপেক্ষ তদন্তের সুপারিশসহ প্রায় ৯০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে নির্যাতন ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কী অগ্রগতি হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে এক বছরের মধ্যে একটি ফলোআপ রিপোর্ট জমা দিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে সাতটি মানবাধিকার সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, অধিকার, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার। এ সংগঠনগুলো এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য। একই সাথে সমস্যার ভয়াবহতা স্বীকার করে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
যৌথ বিবৃতিটিতে বলা হয়Ñ ১৯৯৮ সালে ‘কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার অ্যান্ড আদার ক্রুয়েল, ইনহিউম্যান অর ডিগ্রেডিং ট্রিটমেন্ট অব পানিশমেন্ট’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এরপর এবারই এই প্রথম রিভিউ রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। এই রিপোর্ট পর্যালোচনা শেষে কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রকাশ করেছে ‘কনক্লুডিং অবজারভেশনস’। কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বিধিবিধান মেনে চলছে কি না, তা নজরদারির জন্য নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গড়ে উঠেছে ক্যাট। তারা ১৬ পৃষ্ঠার উপসংহারে বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়াবহ ও নিয়মিত নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
আমরা চাই রিপোর্টে উল্লিখিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো এবার অন্তত বাংলাদেশ সরকার খতিয়ে দেখবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অভিযোগ না ওঠে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement