২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
জনতা ব্যাংক মানছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ

খুঁটির জোর কোথায়?

-

কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে একটি দেশের ‘মুরব্বি’ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে দেশের সবগুলো ব্যাংকÑ তা সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি। দেশের প্রতিটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ মেনেই যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু আমরা যখন শুনি, কোনো একটি সরকারি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ বারবার অমান্য করে চলেছে, তখন প্রশ্ন জাগেÑ এর পেছনে খুঁটির জোর কোথায়?
একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘গোস্ট উইদিন জনতা ব্যাংক’ শীর্ষক এক শীর্ষ সংবাদে জানিয়েছে, জনতা ব্যাংকে নানা ঘটনা ঘটে চলেছে। সর্বশেষ ঘটনায়, ব্যাংকটি ইচ্ছাকৃতভাবে এর পাঁচ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার ঋণের দুই হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ঋণ শ্রেণিবদ্ধ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করেনি। আনন টেক্সকে দেয়া এ ঋণকে শ্রেণিবদ্ধ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য প্রদত্ত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অমান্য করে ব্যাংকটি তা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে জনতা ব্যাংকের ব্যাপারে পরিচালিত একটি তদন্তে বেশ কিছু অনিয়মের ঘটনা উদঘাটন করেছে এ ‘আনন’ গ্রুপের ঋণ সম্পর্কে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তৈরী পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক এই শিল্প গ্রুপের ঋণকে শ্রেণিবদ্ধ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জনতা ব্যাংক এই নির্দেশ বারবার অমান্য করে চলেছে উল্লিখিত ঋণকে শ্রেণিবদ্ধ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমবারের মতো জনতা ব্যাংককে এই নির্দেশ দিয়েছে গত মে মাসে। নির্দেশে ২২টি প্রতিষ্ঠানের মালিক আনন গ্রুপের ঋণ শ্রেণিবদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। কারণ, এই গ্রুপ তার নেয়া ঋণের কিস্তি নিয়মিত প্রদান করছে না। কিন্তু জনতা ব্যাংক সে নির্দেশ অমান্য করেছে।
এর দুই মাস পর জুলাই মাসে জনতা ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সময় চায় ওই গ্রুপের ঋণ শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। উল্লেখ্য, জনতা ব্যাংক এই ঋণ শ্রেণিবদ্ধ করা প্রসঙ্গে তথ্য গোপন করছে। তবে তা আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এই গ্রুপের ঋণ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, তবে এই গ্রুপ আর কোনো ঋণ পাবে না। অথচ গ্রুপটি অব্যাহতভাবে ঋণ পেয়ে যাচ্ছে। কারণ, জনতা ব্যাংক এর কুঋণ স্ট্যাটাস গোপন করে চলেছে।
জনতা ব্যাংকের জনৈক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী জাতীয় দৈনিকটিকে জানিয়েছেন, এ গ্রুপের ঋণ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। কারণ, গ্রুপটি গত মার্চের কিস্তি পরিশোধ করেছে। তিনি বলেন, জনতা ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করবে গ্রুপটির ঋণ শ্রেণিবদ্ধ হতে চিহ্নিত না করার জন্য। কিন্তু দৈনিকটি জানিয়েছে, এ কর্মকর্তার বিবৃতিতে সত্যের প্রতিফলন নেই। কোম্পানিটি গত ডিসেম্বরের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আমরা মনে করি, দুই হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার মতো বড় অঙ্কের ঋণ একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যুক্তিসঙ্গত হয়নি, তার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অমান্য করে জনতা ব্যাংক কী করে পার পেয়ে যাচ্ছে? ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জরুরি হচ্ছে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। নইলে অন্যান্য ব্যাংকেও এ ধরনের অনিয়ম বেড়ে যাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement