২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সঞ্চয়পত্র : ভেঙে ফেলার প্রবণতা বাড়ছে কেন?

জমানো টাকায় হাত দিতে হচ্ছে মানুষের। - ছবি : বিবিসি

বাংলাদেশের বেশিভাগ সাধারণ মানুষের কাছে জমানো টাকার লাভজনক ও নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র। কিন্তু সম্প্রতি নতুন করে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের চেয়ে পুরনো সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের পরিচালক মো: শাহ আলম বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার খুব বেশি কমে নাই, কিন্তু সমস্যা হল নগদায়নের হার বেড়ে গেছে। অর্থাৎ টাকা তুলে ফেলার একটা প্রবৃত্তি আছে মানুষের মধ্যে।’

২০২১ সালে সরকার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমিয়ে দিলে অনেকেই এতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারায়। তার ওপর গত বছর যোগ হয় বেশ কিছু নতুন নিয়ম-নীতি।

তখন সঞ্চয় অধিদফতর জানায় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টেনে ধরা উদ্দেশ তাদের। উদ্দেশ সফলও হয়। গত বছর থেকেই কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ।

রওশন আক্তার নামে একজন বলেন,‘এখন আর সঞ্চয়পত্রে লাভ নাই, লাভ একদম কমায়া দিছে। আগে বেশি পাইতাম, গত বছর কমায়া দেয়ার পর উঠায়া ফেলছি।’ তার মতো অনেকেই সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

আর এর বড় কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কথা উল্লেখ করছেন।

একসময় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা থেকে যে সুদ আসতো তা দিয়ে সংসারের অনেকটা ব্যয় নির্বাহ হলেও বর্তমান বাজারে সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না।

একইসাথে মানুষের সঞ্চয় সংকুচিত হয়ে আসছে বলে মত সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের।

‘মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, ইনকাম বাড়ছে না, ফলে সবই তো খরচ করে ফেলতে হচ্ছে। মানুষ তখনই সঞ্চয় করবে, যখন তার হাতে অতিরিক্ত রোজগার থাকে, আর সাধারণ মানুষ, যারা মধ্যবিত্ত, তাদের বিনিয়োগ করার অন্য তো কোনো জায়গা নেই, একমাত্র সঞ্চয়পত্রটাই আছে। সঞ্চয় না থাকলে তো এটা করা যাবে না।’

সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকারকে বিপুল টাকা খরচ করতে হয়। সাধারণত জনগণের করের টাকা থেকে এই সুদের টাকা পরিশোধ করা হয়। এজন্য গত বছর সরকার নিয়মও বেঁধে দেয় পাঁচ লাখ টাকার ওপর সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক। যা নিরুৎসাহিত করে অনেককেই।

স্বামীর অবসরের পর পেনশনের টাকায় একসাথে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন নুরজাহান বেগম। কিন্তু পরে সেটি ভেঙে ফেলেন তিনি। ‘প্রথমে ১০ লাখ একসাথে রাখছিলাম। টাকাও বেশি আসতো। পরে ভেঙে পাঁচ লাখ রাখছি এখন।’

সুদের হার কমানো ও আয়কর রিটার্ন দাখিল ছাড়াও সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার একটা সীমাও বেঁধে দিয়েছে সরকার। সেটাও নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।

তবে বর্তমান অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলার পেছনে মূল্যস্ফীতিকেই প্রধান কারণ মনে করছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর।

আলম বলেন, ‘এখন আসলে সঞ্চয়পত্রে খুব একটা লাভবান হচ্ছে না মানুষ। কারণ ইনফ্লেশনটা দেখেন ৯ শতাংশের মতো। সরকার সুদ দিচ্ছে ১১ শতাংশ। তার নিট লাভ ২ শতাংশ, বেশি না তো। ফলে সারভাইভ করার জন্য যেটুক জমা আছে, সেটুক তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতাটা এই অর্থবছরে বিশেষ করে বেশি দেখছি।’

একই মত অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুনের। তবে একইসাথে তিনি বলছেন বাংলাদেশে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে তারা ইনভেস্ট করতে পারে।

আর এই মূহুর্তে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে মানুষকে উৎসাহিত করার মত কোনো খবর দিতে পারছে না জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement