২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জুকিনি স্কোয়াশ চাষে কতটা লাভবান হবেন চাষিরা!

জুকিনি স্কোয়াশ চাষে কতটা লাভবান হবেন চাষিরা! - ছবি : সংগৃহীত

জুকিনি স্কোয়াশ বা কোর্জেট একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিদেশীদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। বাংলাদেশে জুকিনি স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের সবজি। তবে কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সবজির চাষাবাদের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

তুলনামূলকভাবে কম উর্বর জমিতে এবং চরাঞ্চলে জুকিনির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় কোর্জেটের চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে রয়েছে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও মাদারীপুর জেলার চাষিরা।

কৃষিবিদরা বলছেন, দেশের অন্য অঞ্চলে এই জুকিনির রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ভাল সম্ভাবনা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে বারি স্কোয়াশ-১ নামে জুকিনির একটি জাত রবি মৌসুমে চাষাবাদের জন্য মুক্তায়ন করা হয়েছে।

বারি স্কোয়াশ-১ একটি উচ্চফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫ টন।

কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ শরফ উদ্দিন বলেন, এই সবজির আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়ায়। স্কোয়াশ আবাদের সুবিধা হলো অল্প সময়ে ও সাশ্রয়ী মূল্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায়, তার চেয়ে দ্বিগুণ স্কোয়াশ লাগানো সম্ভব। পূর্ণবয়স্ক একটি স্কোয়াশ গাছ অল্প জায়গা দখল করে।

তিনি আরো বলেন, স্কোয়াশের একেকটি গাছের গোড়ায় আট থেকে ১০টি পর্যন্ত ফল বের হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয় এটি। দেশে ও বিদেশের বাজারে এর চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে।

কুড়িগ্রামের কৃষক হালিমা আক্তার বলেন, তিনি গত কয়েক বছর ধরে জুকিনি চাষ করেন। যার কিছু তিনি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। বাকিটা যারা রফতানি করেন তাদের কাছে বিক্রি করে দেন। বর্তমান বাজারে স্কোয়াশ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৪০ শতাংশ জমিতে সবজির পরিচর্যা, বীজ ও সার ক্রয়সহ এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় লাভ অনেক বেশি।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। বাজার ভালো থাকলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই আগামীতে এই সবজি চাষের পরিধি আরো বৃদ্ধি করার ইচ্ছার কথাও জানান তিনি।

চাষ পদ্ধতি

কৃষিবিদ ড. শরফ উদ্দিন জানান, জুকিনির জন্য উষ্ণ, প্রচুর সূর্যালোক ও নিম্ন আর্দ্রতা উত্তম। চাষকালীন অনুকূল তাপমাত্রা হলো ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চাষকালীন উচ্চতাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায়।

জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ মাটি চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলিমাটিতে স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়। প্রতি হেক্টরে দুই থেকে চার কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

বীজ বপন ও চারা উৎপাদন

বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সার্ভিসের তথ্য মতে, শীতকালে চাষের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়।

চারা নার্সারিতে পলিব্যাগে উৎপাদন করে নিলে ভালো হয়। বীজ বপনের জন্য আট থেকে ১০ সেন্টিমিটার বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়।

প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে পলিব্যাগে ভরতে হবে। সহজ অঙ্কুরোদগমের জন্য পরিষ্কার পানিতে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা এক ভাগ পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে বীজ এক রাত ভিজিয়ে তারপর পলিব্যাগে বপন করতে হবে।

প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে।

সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি

ভালো ফলন পেতে মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ করতে হবে। তবে মাটির অবস্থা বুঝে সারের পরিমাণ কম/বেশিও হতে পারে। সমস্ত গোবর সার, ফসফরাস ও পটাশ সারের তিন ভাগের দু’ভাগ শেষ জমি প্রস্তুতের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

অবশিষ্ট এক ভাগ পটাশ সার বীজ বপনের ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। তবে নাইট্রোজেন সার তিনটি সমান ভাগে বীজ বপনের ২৫, ৪০ ও ৬০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

সেচ দেয়া

স্কোয়াশ ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। সেচ নালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনো সব জমি ভেজানো বা প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না।

শুধু সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। প্রয়োজনে সেচনালা হতে ছোট কোনো পাত্র দিয়ে কিছু পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যাবে। শুষ্ক মৌসুমে পাঁচ থেকে সাত দিন অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

ফসল সংগ্রহ

ফল পরাগায়নের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। তখনো ফলে সবুজ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে।

কত রফতানি হয়

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর করোনার প্রভাব থাকলেও দেশে থেকে ১১দশমিক ৮৭ কোটি ডলার সমমূল্যের সবজি রফতানি হয়েছিল।

স্কোয়াশ রফতানি করে ২০২০-২১ অর্থ বছরে আয় হয়েছিলো ৪৮দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থ বছরে কিছুটা কমে ২৬ দশমিক ৫০ নেমে আসে।

শাক-সবজি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, জুকিনির একটা আলাদা চাহিদা রয়েছে। তবে স্থানীয় অব্যবস্থাপনার জন্য এই অর্থবছরে কিছুটা কম রফতানি হয়েছে।

তারা বলছে, ইউরোপ, আমেরিকা, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের সবজি। মূলত এসব সবজির ক্রেতা প্রবাসী বাঙালিসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। আর যেসব দেশে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ বেশি সেখানে সবজির কদরও বেশি।

বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ’বাংলাদেশে বিভিন্ন সবজি যেমন নানা দেশে চাহিদা রয়েছে তেমনি জুকিনি স্কোয়াশ রফতানি করেও একজন লাভবান হতে পারেন। কারণ স্থানীয় বাজারের এই সবজি খুব একটা প্রচলিত না, তবে বাইরে এর চাহিদা রয়েছে। আমাদের শুধু কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল