২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পণ্যের দাম বেঁধে দিতে আদৌ কি পারবে মন্ত্রণালয়?

পণ্যের দাম বেঁধে দিতে আদৌ কি পারবে মন্ত্রণালয়? - ছবি : সংগৃহীত

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয় ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার ঘোষণার পর ২০ দিন পার হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। কবে হবে তাও নিশ্চিত নয়। এইসব পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরাও এর প্রবল বিরোধিতা করছেন।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, দাম বেঁধে দিতে পারলে তা ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক হবে, ইচ্ছে মতো দাম আদায় করতে পারবেনা ব্যবসায়ীরা।

গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল, চিনি, রড, সিমেন্ট, চাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল ও ডিম এই নয়টি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

জটিলতায় মন্ত্রণালয় :
কিন্তু দাম বেঁধে দিতে গিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইনি বাধ্যবাধকতায় পড়েছে। কারণ দেশে প্রচলিত আইনে মন্ত্রণালয় সরাসরি দাম নির্ধারণ করতে পারে না। তাই ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ট্যারিফ কমিশনও সব পণ্যের দাম নির্ধারণের জন্য ম্যান্ডেট প্রাপ্ত নয়। ট্যারিফ কমিশন ১৭ ধরনের আমদানি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত তাদের ভোজ্যতেল, চিনি, রড, সিমেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়। ভোজ্যতেল ও চিনির দাম তারা আগে থেকেই নির্ধারণ করে আসছিল। রড ও সিমেন্টে যেহেতু আমদানি করা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তাই তাদের ম্যান্ডেটের মধ্যে পড়ায় তারা এই দুটি পণ্যের দাম নির্ধারণেও কাজ করছে। আর কৃষি পণ্য হিসেবে কৃষি বিপণন অধিদফতরকে পাঁচটি পণ্যের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই পাঁচটি পণ্য হলো চাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল ও ডিম।

কৃষি বিপণন অধিদফতর কোনো আদেশ পায়নি :
কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক আঃ গাফফার খান বলেন, ‘আমাদের তো আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি বলতে পারে না। আমাদের বলবে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এখনো ওই পাঁচটি পণ্যের দামের ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য কোনো আদেশ পাইনি।’

‘আমাদের সরাসরি বলতে পারে শুধু কৃষি মন্ত্রণালয়’
তার কমতে, ‘আমরা প্রতিদিনই কৃষিপণ্যের দাম আপডেট করি, খুচরা কত দাম হবে তা আমরা আমরা প্রতিদিনই আমাদের ওয়েব সাইটে দেই। তাই নতুন করে আমাদের দাম নির্ধারণের কিছু নাই। যে পাঁচটি পণ্যের কথা বলা হচ্ছে ওই পাঁচটি পণ্য আমাদের কৃষি পণ্যের আওতায় রয়েছে৷’

তিনি জানান, ‘কৃষিপণ্য বিপণন অধিদফতরের পরিদর্শকরা প্রতিদিন বাজারে গিয়ে দাম নির্ধারণ করেন। উৎপাদন ব্যয়, পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ হিসাব করে শতকরা ৫-১০ টাকা লাভ রেখে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এখানেও ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে। তারা নানা অজুহাতে আরো বেশি দামে বিক্রি করে।’

কৃষিপণ্য বিপণন অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী বুধবার খুচরা বাজারে সরু চাল ৭০ টাকা কেজি, আটা ৫৭ টাকা কেজি ও ডিমের হালি ৪৫ টাকা।

ট্যারিফ কমিশন যা করছে :
ট্যারিফ কমিশন এরইমধ্যে ভোজ্যতেল ও চিনির দামের সুপারিশ করেছে এবং রড ও সিমেন্টের দাম নিয়ে তারা কাজ করছে বলে জানান কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী। তারা পাম তেল লিটারে ১২ টাকা এবং চিনি কেজিতে বর্তমান বাজার দরের চেয়ে চার টাকা কমানোর সুপারিশ করেছেন।

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, পাম তেলের দাম ১৪৫ টাকা লিটার নির্ধারণ করা আছে। ভোজ্যতেলের দাম লিটারে অন্তত ১২ টাকা কমিয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। বিশ্ব বাজারে সয়াবিন তেলের দামে তেমন প্রভাব পড়েনি, তবে পাম তেলের দাম কমে এসেছে। তাই এই তেলের দাম স্থানীয় বাজারে কমানোর সুযোগ আছে। আর সয়াবিন তেল যে দামে বিক্রি হচ্ছে তা যৌক্তিক। ২৩ আগস্ট প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেঁধে দেয়া হয় ১৭৫ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম করা হয় ৯৪৫ টাকা। চিনির দাম সবশেষ গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, প্রতি কেজি খোলা চিনির খুচরা মূল্য ৮৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত ৮৮ টাকা হওয়া উচিত।

তবে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তথ্য বলছে, খোলা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। ব্র্যান্ড ভেদে দাম আরো বেশি।

শাহ মো: আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, ‘রড ও সিমেন্টের দামের ব্যাপারে সুপারিশ করতে আমাদের আরো সময় লাগবে, আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। কারণ আগে আমরা এই দুটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করতাম না। আমদানি করা ১৭টি পণ্যের দাম আমরা নির্ধারণ করি। তবে এই দুটি পণ্যের কাঁচামাল যেহেতু আমদানি করা হয় তাই আমাদের ম্যান্ডেটের মধ্যেই আছে। আমদানি পণ্যের দাম নির্ধারণে ডলারের দাম, পরিবহন খরচ, আমদানি করতে সময় এই সব বিষয় আমরা বিবেচনায় রাখি। ‘

দুই দফতরের এই দুই কর্মকর্তাই জানান, দাম নির্ধারণ স্থায়ী কোনো বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজার বিবেবচনা করে সমন্বয় করতে হয়।

ব্যবসায়ীরা দাম বেঁধে দেয়ার বিরোধী :
ক্যাব-এর সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, শুধু এই নয়টি নয়, আরো অনেক পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। এতে ভোক্তারা উপকৃত হবেন। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নিতে পারবেন না। তবে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না রাখলে এই ভালো উদ্যোগও কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করেন তিনি।

তার অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সব সময়ই নিজেদের স্বার্থে দাম বেঁধে দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা যাতে এবার সফল হতে না পারে সে ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।

এফবিসিসিআই’র পরিচালক মো: হেলাল উদ্দিন জানান, কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার সুযোগ নেই। এটাকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দেয়া যায় না। তবুও বিশেষ বিশেষ সময়ে আমরা এটা মেনে নেয়। কিন্তু সব সময়ের জন্য এটা হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement